বিএম কলেজের বাসে বহিরাগত যাত্রী, উচ্চশব্দে বাজে গান

বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিএম কলেজের বাস
বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিএম কলেজের বাস  © টিডিসি ফটো

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বাসে বহিরাগত যাত্রী তোলার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব বাস শহরের গৌরনদী, ঝালকাঠি এবং বাকেরগঞ্জ রুটে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলাচল করে। এতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে বহিরাগতরা নিয়মিত যাতায়াত করছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। সাউন্ডবক্সে উচ্চশব্দে গান বাজানোরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাসে জায়গা না পেয়ে সময়মতো কলেজে পৌঁছতে পারছেন না অনেকে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা কিংবা লোকাল বাসে করে কলেজে যাতায়াত করছেন বিএম কলেজের অনেক শিক্ষার্থী। এতে তাদের সময়ের অপচয় হচ্ছে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

বাকেরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী মুহাইমিনুল ইসলাম ফরহাদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, বাকেরগঞ্জ থেকে কলেজ বাসে অনেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। এমনও হয়, অনেক সময় বাসে পা রাখার জায়গা হয় না। প্রচন্ড গরমে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। যেখানে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদেরই বাসে চলাচল করতে কষ্টকর, সেখানে অনেক সময় বহিরাগতদেরও বাসে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে একটা নিয়ম ছিল কলেজ স্টুডেন্ট কার্ড ব্যতীত কাউকে বাসে উঠানো হতো না। কিন্তু এখন আর বাসে ওঠার সময় কার্ড চেক করা হয় না। তাই বহিরাগত শনাক্ত করা কঠিন। ফলে প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের যাতায়াত বাড়ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিও বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বাসে প্রায়ই সমস্যা থাকে। একটু সমস্যা হলেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ম হলো মেয়েরা সামনের দিক দিয়ে নামবে আর ছেলেরা পিছনের গেট দিয়ে। কিন্তু বহিরাগতরা নিয়ম জানে না। তারা ঠেলে সামনে দিয়ে নামে। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বাসের সাউন্ড বক্সে বিভিন্ন ধরনের গান বাজানো হয়।

আগে একটা নিয়ম ছিল কলেজ স্টুডেন্ট কার্ড ব্যতীত কাউকে বাসে উঠানো হতো না। কিন্তু এখন আর বাসে ওঠার সময় কার্ড চেক করা হয় না। তাই বহিরাগত শনাক্ত করা কঠিন। ফলে প্রতিনিয়ত বহিরাগতদের যাতায়াত বাড়ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিও বাড়ছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ সময় অনেকের পরীক্ষা থাকে। অনেক শিক্ষার্থী বাসে বসেও পড়াশুনা করেন। তবে সাউন্ডবক্সে গানের শব্দে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। বাসে লোকাল যাত্রী নেয় চালকরা। এতে তাদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়। অনেক সময় লোকাল বাসের চালকরা যাত্রী না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেন। এতে শিক্ষার্থীরাও লজ্জিত হয়।

আরো পড়ুন: শিক্ষা কর্মকর্তার ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ পাবেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বিএম কলেজ-ঝালকাঠি রুটের বাসে প্রতিনিয়ত চলাচল কারি। কোনো এক কারণে একদিন সকালে আমি কলেজে যায়নি। তবে কলেজের বাস যখন বিকেলে ঝালকাঠি এসে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে বরিশালের উদ্দেশে ব্যাক করে, তখন আমিও বরিশালের উদ্দেশে রওনা হই। তখন দেখলাম ফাঁকা বাসে তারা বহিরাগত যাত্রী তোলেন এবং সবার কাছ থেকে ভাড়া নেন। আমার কাছ থেকেও ভাড়া নিয়েছেন। আমি বিএম কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। বাসে আমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট ছিল। সবার কাছ থেকেই ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে বাকেরগঞ্জ রুটের কলেজ বাসটি শিক্ষার্থীদের আনার উদ্দেশ্যে বরিশাল থেকে বহিরাগত যাত্রী নিয়ে বাকেরগঞ্জ যায়। বাকেরগঞ্জে যাত্রী নামিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময়ও কলেজ বাসে শিক্ষার্থীদের সাথে বহিরাগত যাত্রী তুলতে দেখা যায়। চলতি পথে বাসের সাউন্ড বক্সে গান বাজাতেও শোনা যায়।

বাকেরগঞ্জ রুটের বাসের কর্মী মো. হানিফ বলেন,  সকালে যখন খালি বাস যায়, তখন বরিশাল শহরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা আমাদের বাসে যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে অভিভাবকরাও আসেন।

এ বিষয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের তিন রুটে মাত্র তিনটি বাস চলে। এত পরিমাণ শিক্ষার্থী আসা যাওয়া করে যে, আমরা ওদেরই জায়গা দিতে পারি না। বাসে বহিরাগত যাত্রী তোলার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমরা দেখব।


সর্বশেষ সংবাদ