ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে জনপ্রিয়তা পান এরশাদ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৯ AM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৯ AM
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত মুখ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে টানা নয় বছর দেশ পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়া পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত।
নয় বছরের শাসনামলে দেশের উন্নয়নে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এরশাদ। উপজেলা পদ্ধতির প্রচলনসহ নানা উদ্যোগ নেন তিনি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় উপজেলা পদ্ধতির প্রচলন করেন। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে।
১৯৮৬ সালে নতুন দল জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এবং অধিকাংশ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে নতুন পরিচয় পায় বাংলাদেশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সংবিধান ১৯৭২ সালে রচনা করা হলেও রাষ্ট্রধর্মের কথা উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরেই ২(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
বাংলাদেশে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করায় অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থের বিষয়টিও সংবিধানে যোগ করেছিলেন এরশাদ। এ উদ্যোগে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ওই বছরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র পক্ষে কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেন।
দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে বিভিন্ন উত্তাপ ছড়ালেও ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ মহামান্য আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন। ২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধনে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেলেন, তাঁর দল সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিতে চায় না।
আজ রোববার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এরশাদের মৃত্যুতে শোকাহত প্রাক্তন স্ত্রী বিদিশা এরশাদ সকালে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমীর শরীফ আসলাম আর তুমি ও চলে গেলে। এতো কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল। আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়াতে যেখানে থাকবে না কোনো রাজনীতি।’
গত ২৬ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন এইচএম এরশাদ। ৪ জুলাই বিকেল তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। কয়েকদিন অবস্থার দৃশ্যমান কিছুটা উন্নতি মনে হলেও গত রবিবার ভোর থেকে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। তার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা কৃত্রিম উপায়ে তাকে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছিলেন। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে বুধবার সকালে তাকে সিএমএইচের ক্রিটিক্যাল ইউনিটে ভর্তি করা হয়।