২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪২

‘সব স্যাক্রিফাইস করে জারা এসেছেন রাজনীতি বদলাতে, বিনিময়ে আমরা কি দিলাম?’

তাসনিম জারা ও সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান (ইনসেটে)  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ও দুর্বার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান বলেছেন, ‘তাসনিম জারার বয়স মাত্র ৩১ বছর। চাইলেই শুধু ডাক্তার হিসাবে কিংবা ফেসবুক, ইউটিউব কন্টেন্ট তৈরি করেই এই মেয়েটা কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু উনি সবকিছু স্যাক্রিফাইস করে এসেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকে বদলাতে, তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আর পুরো বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে। বিনিময়ে এই প্রচন্ড মেধাবী আর জ্ঞানী মেয়েটাকে আমরা কি দিলাম? যুক্তরাষ্ট্রের একটা এয়ারপোর্টে অশ্লীল গালাগালি আর অপমান!’

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন তিনি। আতিক ইউএ খান বলেন, ‘১৯৭১ সাল হতে ২০২৪ সাল, পুরো ৫৩ বছরে যত ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর আওয়ামী লীগ নারী নেতাকর্মী এসেছে, তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে দেখান, যিনি এই বয়সেই জ্ঞানে, কর্মে, ব্যবহারে আর দেশপ্রেমে তাসনিম জারার সমান! তাসনিম জারাকে অপমান করার অর্থ হল, বাংলাদেশকেই অপমান করা। কারণ এই মেয়েটা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে।’

তিনি বলেন, ‘তাসনিম জারা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মেয়ে, যিনি ২০১৬ সালে দাদীর একটা সুতির শাড়ি পরে কোন গয়না আর মেক আপ ছাড়াই খালেদ সাইফুল্লাহকে বিয়ে করেন। তাসনিমের সেই বিয়ের ছবি ভাইরাল হয়ে যায় এবং বিস্ময়করভাবে অধিকাংশ মেয়েরাই তাসনিমের এই গয়না আর মেকআপ বিহীন বিয়েকে স্টান্টবাজি হিসেবে সমালোচনা করেছিলেন।’

পরবর্তীতে অবশ্য তাসনিম জারা বহুবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে নারী হিসাবে পাহাড় সমান উচ্চতায় উঠতে মেধা আর যোগ্যতাই যথেষ্ট, মেকআপ লাগে না- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাসনিম এখনো কোন মেক আপ করেন না। আসলে করার প্রয়োজনই পড়ে না।তাসনিম জারা ভিকারুননিসা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।’ 

আরও পড়ুন: জাবিপ্রবিতে ‘ফ্যাসিবাদী অনুশাসন’ বাতিলের দাবিতে তিন সিন্ডিকেট সদস্যের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি

তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এভিডেন্স-বেইজড হেলথ কেয়ার বিষয়ে ডিসটিংশনসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন জানিয়ে আতিক ইউএ খান বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে তিনি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালসমূহে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিষয়ে রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। তাসনিম ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের প্রেস্টিজিয়াস এমআরসিপি ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন। জারা ‘সহায় হেলথ’ নামক একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা বাংলাভাষী জনগণের জন্য প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তথ্য প্রদান করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে জারা ‘সহায় প্রেগন্যান্সি’ মোবাইল অ্যাপের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন, যা গর্ভাবস্থার প্রতিটি সপ্তাহের জন্য তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করে। গবেষক হিসেবে তাসনিম জারা আন্তর্জাতিক পর্যালোচিত জার্নালে একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে তাসনিম জারা বাংলাভাষায় স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিডিও তৈরি করা শুরু করেন যা ফেসবুক আর ইউটিউবে প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়।’

আতিক ইউএ খানের ভাষ্য, ‘তাসনিম জারার কোভিড-১৯ প্রতিরোধ, টিকা সংক্রান্ত সচেতনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভিডিওগুলো  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিবিসি, স্কাই নিউজ, আইটিভি এবং ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে, যুক্তরাজ্য সরকার তাকে বৈশ্বিক ‘ভ্যাকসিন লুমিনারি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।’