০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩:০৪

৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের আর চব্বিশ ছিল তা রক্ষার যুদ্ধ : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান  © ফাইল ফটো

১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেছেন। 

তিনি বলেন, যারা কৌশলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শাসনের তুলনা করতে চান, তাদের ৫ আগস্টের দিনটির কথা স্মরণ করা উচিত। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে ‘ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ’ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সেই শাসকগোষ্ঠী, বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘রাহুমুক্ত হয়েছিল দেশ। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের কাছে দিনটি বিজয়ের, দিনটি আনন্দের,’ বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, একুশ শতকের এই বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচার এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম, খুন, অপহরণ, হামলা, মামলা, নির্যাতন নিপীড়ণকে সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তর করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে দেশে শত শত গোপন বন্দিখানা ‘আয়নাঘর’ বানানো হয়েছিল। সেই আয়নাঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জলজ্যান্ত মানুষকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী কিংবা কমিশনার চৌধুরী আলমের আজও খোঁজ মেলেনি।

আরও পড়ুন: মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যাঙ্কগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছিল। দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়, অনিয়ম, অনাচার, দুরাচার, লুটপাট দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছিল। দেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ব্যক্তিতন্ত্র।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ। আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ ভোলেনি। ২৪ এর গণঅভ্যুথানের শহীদদেরও বাংলাদেশ ভুলবে না।

তারেক রহমান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ জবাবদিহিমূলক একটি রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে।

ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টয়ের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করতে চান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নিজিরবিহীন।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। সংসদ ভবন রেখে সাংসদ পালিয়েছে। আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে। বায়তুল মোকাররম ছেড়ে প্রধান খতিব পালিয়েছে। ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক এই ফ্যাসিস্ট চক্রের মনে এখনও কোনও অনুতাপ-অনুশোচনা নেই।

আরও পড়ুন: ৫ আগস্ট হাসিনার ভারত পলায়ন, সেদিন দিল্লিতে যা যা ঘটেছিল

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, হাজারও শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না, বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। আমি মনে করি, এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটি বিরোধ নয় বরং ভিন্নমত। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রকামি জনগণের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।

জনগনের ভোটাধিকার নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যতদিন পর্যন্ত সরাসরি ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সরকারে প্রকৃত জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।