নতুন দলের সদস্যসচিব নির্বাচন নিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত শিক্ষার্থী ও তরুণরা

নতু দলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শীর্ষ পদে থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হলেও সদস্যসচিব পদে পাঁচজন আলোচনায় রয়েছেন
নতু দলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শীর্ষ পদে থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হলেও সদস্যসচিব পদে পাঁচজন আলোচনায় রয়েছেন  © টিডিসি সম্পাদিত

নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদ নিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তরুণ ও শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বাদ পড়ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। দলের কমিটিতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শীর্ষ পদে থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হলেও সদস্যসচিব পদে পাঁচজন আলোচনায় রয়েছেন।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে আখতারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অনেকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বেশি সরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোয় সারারাত রীতিমতো চর্চার বিষয় ছিল ইস্যুটি।

অনেকে বলছেন, আখতার শুধু চব্বিশের অভ্যুত্থান থেকে নয়, বরং ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। এরইমধ্যে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জনমত জরিপেও এগিয়ে রয়েছেন আখতার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রধান হচ্ছেন বলে অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেছে। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড কে হবেন, সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহবায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক আলী আহসান জুনাইদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আখতারকে ‘মাইনাস’ করছেন কারা?

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঘোষণা হতে যাওয়া নতুন দলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রধান হচ্ছেন বলে অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেছে। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড কে হবেন, সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা। এত এগিয়ে আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহবায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক আলী আহসান জুনাইদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

জানা গেছে, আখতারকে চাচ্ছেন জানাকের একটি অংশ। তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আখতারের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম, আন্দোলনে গ্রেফতার ও ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করছেন।

জানাকের শীর্ষ এক নেতা বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে ছাত্রনেতাদের মধ্যে তিনটি কোরাম হয়েছে। একটি বামধারা থেকে আসা ছাত্রনেতাদের, দ্বিতীয়টি সাবেক শিবির নেতাদের এবং তৃতীয়টি মোটাদাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, যাদের মূল ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা ছাত্রশক্তি।

আলী আহসান ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। সূত্র বলছে, নতুন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডে তাকে আনার চেষ্টা করছেন জামায়াতপন্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানাকের এক নেতা বলেন, আখতার উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে করা হয়নি। নতুন রাজনৈতিক দল ইনক্লুসিভ করতে গিয়ে এখানে নানান মতের মানুষ আসছে। শিবির চায় তাদের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে আসুক। বামরা প্রথমে আখতারের দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য তাকে নেতা হিসেবে চায়লেও এখন চায় না। 

ছাত্রশক্তি থেকেও আখতারকে চায় না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না। তবে যে যাই বলুক, মাহফুজ এখানকার ব্রেইন। নাহিদ প্রধান হোক। কিন্তু আখতারকে সেকেন্ড ইন কমান্ডে না রাখলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। তার প্রতি অন্যায় হবে।

একই ধরনের কথা বলেন জানাকের আরেক নেতা। অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুল্লাহ হিল বাকি এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আখতার হোসেনের কোনো ভূমিকা নেই! ১৭ জুলাই ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথম পুলিশি ক্র্যাকডাউনের মূল টার্গেটই ছিল তাকে আটক করা। সাহসী উচ্চারণে সেদিন স্ফুলিঙ্গ ফুটেছিল চারদিক। যেটা রয়টার্স কাভার করেছিল সেদিন।’

অন্য একটি পোস্টে তিনি লেখেন, আখতার হোসেনদের লড়াই শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে নয়, বরং ঢাবির প্রশ্নফাঁস আন্দোলন থেকে শুরু, যার ধারাবাহিকতায় ডাকসুসহ সব আন্দোলনে মূল ফোকাস পয়েন্টেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লেখেন, ‘আখতারকে শীর্ষ দুই পদের মধ্যে না রাখলে নতুন দলের অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটবে।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং জানাকের যুগ্ম সদস্য সচিব রাফে সালমান রিফাত এক রহস্যময় পোস্ট করেছেন তার ফেসবুক প্রোফাইলে। 

তিনি লিখেন, ‘আখতারকে মাইনাস করছে কে? নাহিদ নাকি মাহফুজ? কই থেকে মাইনাস করতেছে? দলে নেবে না?’ একই পোস্টে তিনি ব্রাকেটে লিখেন, ‘নির্দোষ প্রশ্ন। আমি আসলেই জানি না কিছুই।’তার পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেছেন। 

কাজী সাইফ হৃদয় নামের একজন লেখেন, ‘শুরু থেকে মাইনাস মাইনাস গেমিং খেলতে খেলতে এ পর্যন্ত। এখন আখতার ভাইকেও মাইনাস করলে দল গঠন করে  কতদূর যায় সেটাই দেখার বিষয়।’ সালমান সাহেদ মন্তব্য করেন, ‘আখতার ভাইরে তো আগস্টেই মাইনাস করছে। নাগরিক কমিটির পদ সন্ত্বনা পুরষ্কার ছিল।’

আরো পড়ুন: ৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কমিটি, নেপথ্যে প্রভাব বিস্তার-চাঁদাবাজি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া তার পোস্টে বলেছেন, ‘আখতার হোসেনকে মাইনাস করার আলোচনা আসছে এখন। বিপ্লবের ছয় মাস পরে। তাকে প্রথম মাইনাস করেছে তার নিজ দল ছাত্রশক্তির লোকেরা। আখতার হোসেনও পারতো নিজের নামের শুরুতে সাবেক উপদেষ্টা শব্দটা যোগ করতে। তারপর রাজনৈতিক দল গঠনের আগে আগে এসে দলের প্রধান হতে। কিন্তু তাকে সেটা করতে দেওয়া হয়নি। আখতার তো হবে দলের প্রধান। তাকে সেটা না করে এখন মাইনাস মাইনাস খেলা শুরু করলো কারা?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিতে আসা আখতার হোসেনের হাত ধরেই। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ওনার ভালোবাসা সব সময় আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসে একক নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়িয়েছেন কোনো যদি-কিন্তু ছাড়া সচেতন নাগরিক হিসেবে আখতার হোসেনের পাশে আছি। কাউরে নিয়া ষড়যন্ত্র কইরেন না।’

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, আখতার হোসেন, আলী আহসান জুনাইদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ’র বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কল রিসিভ না করায় এবং একাধিক নেতার ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জনমত জরিপ

তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় প্রধান বা সদস্য সচিব হিসেবে বেশ কিছু নাম উচ্চারিত ও আলোচিত হচ্ছে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কাকে সমর্থন করছেন। এতে অন্তত ৫১ শতাংশ আখতার হোসেনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আর ২৪ শতাংশ সারজিস আলমের পক্ষে। এ ছাড়া হাসনাত আব্দুল্লাহ ১৪, আলী আহসান জুনাইদ ৮ এবং নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ৩ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ