গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের আলোকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ PM , আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ PM
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুল্যে অত্যন্ত প্রকট। সংসদ সদস্য-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-ইউএনও- এ ত্রিমুখী টানাপোড়েনে উপজেলা পরিষদ এর যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারছে না। আইনে উল্লেখ থাকলেও হস্তান্তরিত কার্যক্রমগুলো এখনও উপজেলা পরিষদের কাছে যথাযথভাবে ন্যস্ত করা হয়নি। জেলা পরিষদের কাজ কী, জেলার মানুষের কোন উপকারে তারা পাশে থাকেন- এ সম্পর্কে কারোরই কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পৌরসভা এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের ‘পরামর্শ’ উপেক্ষা করা যায় না। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের ‘নগর সরকার’ গঠনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে 'গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার' শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব বলেন। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ, হাসান আরিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও সি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ। এছাড়া সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও লীড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ নোমান, ডেমক্রেসিওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন তালেয়া রেহমান, এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল, কেয়ার বাংলাদেশের খ্রিষ এক্টিভিটির চিফ অফ পার্টি আমানুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর জিয়াউল করিম, একশনএইড বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন প্রমুখ। এছাড়াও প্রাক্তন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যুব ও নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন। সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।
স্বাগত বক্তব্যে মহসিন আলী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দুর্নীতি, স্বেচ্চাচারিতার কারণে এ পদক্ষেপগুলো কার্যকর হয়নি। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি দলপুষ্ট হওয়ায় দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা ব্যতিব্যস্থ থাকেন, পক্ষান্তরে জনআকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো পেছনে পড়ে যায়। আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও সক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার। তবেই জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে। এ. এফ, হাসান আরিফ বলেন, সংলাপ একটি চলমান প্রক্রিয়া, জনআকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার একটি প্লাটফরম। এখানে বহুমত থাকবে ধরনের আলোচনাকে ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে দিতে হবে। উপমহাদেশে এক'শ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকারের কাঠামো চালু থাকলেও এখনও আমরা একে শক্তিশালী করে তুলতে পারি নাই। আইনে অনেককিছু থাকলেও আমরা সেসব কার্যকর করতে পারি নাই। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দৃঢ় হতে হবে। স্থানীয় সরকারের সংস্কারের দাবিগুলো উত্থাপন করা দরকার নির্বাচিত সরকারের কাছে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার করলে পরবর্তীতে তারা তা অব্যাহত রাখবেন কি-না সে নিশ্চয়তা নেই। তাই যারা জনপ্রতিনিধি হবেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন যেসব রাজনৈতিক দল, তাদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে হবে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার- সকল পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে।
আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, আমরা সংস্কার চাই নাকি কাঠামোগত বিপ্লব চাই সেটা সুস্পষ্ট করতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। সংস্কারে নাগরিক সমাজ যেমন একটি অংশ, আমলাতন্ত্রকেও এর অংশীজন হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে, তৃণমূল জনগণের কাছ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব হতে হবে পূর্ণাঙ্গ, যা সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ অবশ্যই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে। সকল সংস্কারের লক্ষ্য হতে হবে সুশাসন কায়েম করা ও জনসেব্য নিশ্চিত করা। অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ বলেন, আমরা এ ধরনের কাজে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে সত্তর বছর ধরে সহায়তা করে আসছি। আজকের এ আয়োজনও অনুপ্রেরণামূলক। বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে আরো কী কাজ করা যায়, সে বিষয়ে দি এশিয়া ফাউন্ডেশন আরো ভাবনা-চিন্তা করবে।
স্বপন কুমার সরকার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথ চ্যানেলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করতে হবে স্থানীয় সরকারে এবং সময়ে সময়ে এ ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। নিয়মিত ও যথযথ নিয়মে অডিট পরিচালনা করতে হবে। ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান বলেন, গত ৫৩ বছর ধরে স্থানীয় সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। কোনো সরকারই এটা আসলে চায়নি। সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টার ভূমিকা দিয়েই কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে স্থানীয় সরকারে পোক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের কাজগুলোর ওভারল্যাপিং দূর করতে হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য একটি টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করতে হবে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আমাদের বাস্তবতায় ভাবতে হবে। জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকারকে আলাদা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসন থেকে প্রেষণে স্থানীয় সরকারে কর্মকর্তারা যেতে পারেন। তালেয়া রেহমান বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে স্থানীয় সরকার সংস্কারের এসব দাবি তুলে ধরে আসছি। এবারে যেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের উত্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়। আব্দুল আউয়াল বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এসডিজি অর্জনে অচিরেই কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা স্থানীয় সরকারে হস্তান্তর করতে হবে। আমানুর রহমান বলেন, জনআকারক্ষার কথা বলতে গেলে স্থানীয় সরকারের বর্তমান যে কাঠামো তা বহাল থাকবে কি-না সেটা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করতে হবে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে আলাদা ক্যাডার সার্ভিস হতে পারে।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত কার্যকর করতে হবে, সরকারি সকল সেবার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কমিটিতে নারী ও যুব-তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে, প্রত্যেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম জনগণ দ্বারা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাকে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কার্যকর করতে হবে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্রমুক্ত হতে হবে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে মানবিক উন্নয়নের জন্যও স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে, স্থানীয় সরকারের সকল কার্যক্রমে জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে, স্থানীয় সরকার শুধু চেয়ারম্যান বা মেয়র কেন্দ্রীক না হয়ে, সদস্য ও কাউন্সিলরদেরও ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন ইত্যাদি।
ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ১১, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ অনুচ্ছেদগুলোতে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার থাকবে এবং এ সকল প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট ক্ষমতা, বিশেষত আর্থিক ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময়ের সংশোধনসহ মূলত ২০০৬ সালে প্রণীত স্ব স্ব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে থাকে। তিনি গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের অভিজ্ঞতা ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার সংস্কারের উদ্দেশ্যে যে সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন সেগুলো হলো। স্বল্পমেয়াদি সংস্কার প্রঙ্কাব। সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টার ভূমিকা সম্বলিত বিধান বাতিল করা: আইন অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভূমিকা ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন কার্যকর করা। উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের ভূমিকা, দায়-দায়িত্বের বিভাজন সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব সুস্পষ্ট করা। স্থানীয় সরকারের মডেল ট্যাক শিডিউল হালনাগাদ করা। বৈষম্য সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বিবেচনায় নয়, স্থানীয় সরকারের সকল স্তরের জন্য সরকারি বরাদ্দ নির্দিষ্ট ফরমুলা ভিত্তিক করা। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সমন্বয়ের সুবিধার্থে কাছাকাছি সময়ে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র/চেয়ারম্যানদের তাদের আওতাধীন এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কার্যক্রম তদারকি, মনিটরিং এবং তাদের বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লেখার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো কার্যকর করতে রাজস্ব খাতে বরাদ্দ রাখা এবং কমিটিগুলোতে অধিকসংখ্যক নাগরিক প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও (ওয়ার্ড সভা, উন্মুক্ত বাজেট ইত্যাদি) জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন পূর্বের মতো নির্দলীয় ভিত্তিতে আয়োজন করা। মধ্যমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাব স্থানীয় সরকারের সকল আইনের মধ্যে যেসব ওভারল্যাপিং ও অস্পষ্টতা আছে তা চিহ্নিত করে, দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে রাষ্ট্রের সেবামূলক কার্যক্রমসূহ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি) ন্যস্ত করার বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা; স্থানীয় সরকারের সকল জ্বরে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের বিধান করা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রূপান্তর করা। জেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন ডেপুটি কমিশনার বা জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বে জাতীয় কর নীতির আলোকে জেলা পর্যায়ে কদর পর্যালোচনা ও সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর সংগ্রহের কাজ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। জেলা পরিষদকে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমের মূলকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং বড় প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে তাদের প্রকল্পের আকার নির্দিষ্ট করে দেয়া। জেলা পরিষদকে বাণিজ্যিক প্রকল্প গ্রহণের যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করা। ওয়েব ভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং মনিটরিং ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করা। অবিলম্বে স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন ও কার্যকর করা। জনপ্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ফলপ্রসু করার উদ্দেশ্যে এনআইএলজিকে বিকেন্দ্রীভূত করা এবং প্রেষণে নিয়োগ না দিয়ে বিশেষায়িত জনবল নিয়োগ ও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা। জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। স্থানীয় সরকারের জন্য সম্পদ আহরণের নতুন উৎস অনুসন্ধান এবং বরাদ্দ অর্থ স্থানান্তরের একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় সম্পদ আহরণ ও বাজেটের যথাযথ ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য ম্যাচিং গ্রান্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা। স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি নিবেদিত গবেষণা, ডকুমেন্টেশন ও নীতি তথ্য ভান্ডার স্থাপন করা।