চাকরি করেন দশ বছর, স্কুলে যাননি এক দিনও

  © ফাইল ছবি

বগুড়ার ধুনটের বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী-কাম হিসাব সহকারী পদে চাকরি করে জুলিয়া আকতার জুঁই। প্রায় ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। তবে একদিনের জন্যও স্কুল যাননি। তবে মাস শেষে ঠিকই বেতন তুলছেন জুঁই।

জানা গেছে, জুঁইর শ্বশুর স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, ননদ প্রধান শিক্ষক, স্বামী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। শ্বশুর বাড়ির এ ক্ষমতা ব্যবহার করে স্কুলকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারটি এলাকার সবারই জানা। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি কেউ। কারণ জুঁইয়ের স্বামী আলিম আল রাজী বুলেট ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা।

গত ৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বগুড়া জেলা প্রশাসক, ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে জুঁইয়ের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ করেন অভিভাবক হাবিবর রহমান।

অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, জুলিয়া আকতার জুঁই ২০১২ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত বাঁশপাতা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী-কাম হিসাব সহকারী পদে যোগ দেন। তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর এক দিনের জন্যও কর্মস্থলে যাননি। এখন থাকেন বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়ার ভাড়া বাসায়। কর্মস্থলে না গিয়েও দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে বেতন তুলছেন। তাঁর বর্তমান মাসিক বেতন ১২ হাজার ২০১ টাকা। বেতন ছাড়াও ঈদ-পার্বণে তুলছেন উৎসব ভাতাও।

সরকারের এমপিওভুক্তি তালিকার তথ্য অনুসারে মাসিক অর্থছাড় বিবরণীতে জুলিয়া আকতার জুঁইকে সেই প্রতিষ্ঠানের একজন তৃতীয় শ্রেণির নিয়মিত কর্মী হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ১১-০১৩৮৬৭-৩ নম্বর হিসাবের ১৬ নম্বর কোডের মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে সরকারি বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে এমপিওভুক্তি হয়েছে ১৩ জনের। এর মধ্যে ১০ নম্বরে রয়েছে জুঁইয়ের নাম। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইমরুল কায়েস, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষক মিল্টন আজিজ ও লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল হাসানের এখনও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত রয়েছেন।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, আমরা জানি জুঁই নামে একজন এই বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। কিন্তু কখনও তাকে স্কুলে আসতে দেখি নি। প্রতি মাসে চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কাগজপত্রে জুঁইকে কর্মস্থলে উপস্থিত দেখানো হয়। এমনকি প্রধন শিক্ষক তার আত্মীয় হওয়ায় তার সাথে ছাড়া অন্য কারও সাথে তার পরিচয় নেই।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা সুলতানা বলেন, জুঁই তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি কর্মচারী হিসেবে স্কুলে নিয়মিত আসেন। তাঁর অনুপস্থিতির বিষয়টি সঠিক নয়।

এ ব্যাপারে জুলিয়া আকতার জুঁই জানান, তিনি বগুড়া শহরে থাকেন। সেখান থেকে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হন বলে দাবি করেন। বগুড়া শহর থেকে ধনুট বিদ্যালয় প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বের পথে কিভাবে যাতায়াত করেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আশ্চর্যজনক এবং গুরুতর অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ