বিদেশি মেডিকেল ছাত্রী রাউধা মৃত্যুর ঘটনা পুনঃতদন্তের নির্দেশ

রাউধা আতিফ
রাউধা আতিফ  © ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক 'ভোগ' সাময়িকীর মডেল, মালদ্বীপের বাসিন্দা ও  রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী রাউধা আতিফ হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মহিদুর রহমান শুনানি শেষে এই আদেশ দিয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্ত করাতে বলা হয়েছে। 

মালদ্বীপের বাসিন্দা রাউধা আতিফ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থীদের হোস্টেল কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বিছানার ওপর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। 

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা করেছেন মডেল রাউধা: পিবিআই

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। পুলিশ যাওয়ার আগেই দরজা ভেঙে লাশটি নামানো হয় বলেও দাবি করে কর্তৃপক্ষ। 

তবে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফের দাবি তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাই তিনি রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে ময়নাতদন্ত শেষে রাউধার লাশ রাজশাহীতে দাফন করা হয়।

হত্যা মামলা করার পর কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। 

মামলার বাদী ডা. মোহাম্মদ আতিফ বলেন, তিনি একজন চিকিৎসক। তিনি নিশ্চিত যে, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তদন্ত প্রভাবিত করা হয়েছে। তিনি ন্যায় বিচার পাননি। তাই আবারও নারাজি দাখিল করেছিলেন।

আরও পড়ুন: মডেল রাউধার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ইন্টারপোল

আদালতের এ আদেশের মাধ্যমে নথিজাত হওয়া 'মৃত' মামলা পুনরুজ্জীবিত হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবার তদন্তে তাঁর মেয়েকে হত্যার বিষয়টি উঠে আসবে।

আইনজীবী আসলাম সরকার বলেন, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে লাশ নামানো হলে দরজায় আঘাত থাকবে। ছিটকিনি ভাঙা বা বাঁকানো থাকবে। ৪০ কেজি ওজনের একটা মানুষও যদি ফ্যানে ঝুলে তাহলে সেই ফ্যানেও একটা চিহ্ন থাকবে। পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে। এসব কিছুই পাওয়া যায়নি। তাহলে মেয়েটা আত্মহত্যা করল কীভাবে? এই বিষয়গুলোই আদালতকে বোঝানো হয়েছে। 

'তাই আদালত মামলা পুনঃতদন্তের আদেশ দিয়েছেন। আদেশের কপি দ্রুতই আদালত থেকে রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনারের কাছে পাঠানো হবে।'

এর আগে, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর শাহ মখদুম থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার আলী তুহিন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক আসমাউল হক আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এতে নারাজি দেন রাউধার বাবা। আদালত তা গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। 

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান ২০১৯ সালের ১৮ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি থাকার কথা উল্লেখ করেন। আর তার নিজের তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার আসামি সিরাত পারভীনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত মামলাটি নথিজাত করেন। 

এতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবারও মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন। রাউধা হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আসলাম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি তিনি মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে মামলার রিভিশন আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল আদালতে রিভিশনের আবেদন মঞ্জুর হয়। সেদিন আদালত নিম্ন আদালতে বাদীর নারাজি আবেদন দাখিলের অনুমতি দেন। 

এরপর ২৯ জুন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ বাদীর নারাজি আবেদন দাখিল করা হয়। এরই শুনানি অনুষ্ঠিত হলো আজ মঙ্গলবার। শুনানির আগে আদালত মামলার বাদী ডা. মোহাম্মদ আতিফের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে শুনানি শেষে মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন।


সর্বশেষ সংবাদ