গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁঁচার উপায়

ডায়রিয়া রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার কৌশল
ডায়রিয়া রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার কৌশল  © প্রতীকী ছবি

এই গরমের মওসুমে নানা ধরণের রোগব্যাধি ছড়াতে দেখা যায়। তীব্র গরমের সময় রোগগুলো প্রকট হয়ে ওঠে। প্রতি বছর বিশেষ করে গরমের সময় যে কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে দেখা যায় তার মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। তবে কিছুটা সতর্ক হলেই এসব রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়।

ডায়রিয়া সারাবছরের একটি রোগ হলেও প্রতিবছর গরমের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশে এর মধ্যেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া রোগী।

আরও পড়ুন: যে কাজে রিজিকের বরকত কমে যায়

ঢাকা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তারের  মতে, গরমের সময় পানি বেশি দূষিত হয়। সেই পানি পান করলে ডায়রিয়া বা কলেরা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময়টাতে সারা বাংলাদেশেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। তাই হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-আক্রান্ত নানা বয়সের রোগীর ভিড় দেখা যায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।

ডায়রিয়া কী এবং কেন হয়?

সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে।এটি মূলত পেটের অসুখ। দূষিত পানি বা পচা খাবার থেকে পেটের পীড়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া হলে খুব দ্রুত শরীর থেকে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত দেখা দেয়। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনো কখনো নোরো ভাইরাস। তবে পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা গেলে বা প্রবল জ্বর দেখা দিলে তা ভাইরাস নয়, বরং ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। ডায়রিয়ায় বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়ায় সারা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর দুই বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হল, রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। গরমে যেসব কারণে ডায়রিয়া হয় চলুন সেগুলো জেনে নেই।

  • বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব।
  • সাধারণত গরমে প্রচণ্ড পিপাসায় অনেকেই রাস্তাঘাটের শরবত, পানি পান করে থাকেন।  অস্বাস্থ্যকর এইসব খাবার-দাবারকে ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়।
  • অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা।

আরও পড়ুন: এই গরমেও আরামে থাকার উপায়

  • যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ করা।
  • সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া। অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা।
  • অপরিছন্ন দোকান বা অপরিছন্ন রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া। বাসি, পঁচা খাবার খাওয়া।


ডায়রিয়া হলে কী চিকিৎসা করাবেন?

আমরা জানি ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং রক্তে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। এসব সমাস্যা রোধ করার জন্য খাবার স্যালাইন পান করাই হল ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা। চলুন জেনে নেই কিভাবে খাবার স্যালাইন তৈরী করে পান করবেন:

  • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে। (জন্ম থেকে দুই বছর: ৫০-১শ মি.লি. দুই বছর থেকে ১০ বছর ১শ-২শ মি.লি. ১০ বছর বা তার বেশি বয়সে পুরো ১টি বা অর্ধেক স্যালাইন পরিস্কার পানির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে খেতে হবে।)
  • খাবার স্যালাইন আমরা ঘরেই তৈরি করে নিতে পারি। উপকরণঃ এক গ্লাস পরিষ্কার ফুটন্ত পানি ঠান্ডা করে নিতে হবে +তার মধ্যে একচিমটি লবণ +একমুঠো চিনি নিয়ে একটি পরিষ্কার চামচ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: রমজান মাসে ফজিলত বাড়ানোর ‍উপায়

  • খাবার স্যালাইন ছাড়াও ঘরে তৈরি তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে।
    খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধও খাওয়াতে হবে।
  • এছাড়া পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করতে হবে। যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না সেদিকেও লক্ষ করতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া বা জিভ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া পানিশূন্যতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বা বমির কারণে পর্যাপ্ত স্যালাইন না খেতে পারলে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়:

  • খাবার আগে সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • মাছি থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং রান্না করা খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে।
  • রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, খাবার ইত্যাদি পান পরিহার করতে হবে।
  • পঁচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
  • ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের দুধ।
  • খাবার তৈরির আগে এবং পায়খানার পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence