৩০ মে ২০২৫, ১০:৪২

প্রধান উপদেষ্টা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যেসব চুক্তি হলো

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শিগেরু ইশিবা  © সংগৃহীত

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৩০ মে) টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার কার্যালয়ে তাদের বেঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

জাপান-বাংলাদেশের যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে স্মরণ করে উভয় পক্ষ কৌশলগত অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

উভয় নেতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করেন এবং জাতিসংঘ সনদের মূলনীতি মেনে চলার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন। দুই দেশ নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষই আইনের শাসনের পাশাপাশি গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে বহুপাক্ষিকতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।

দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড, শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের প্রচেষ্টা এবং জাতি গঠনের কর্মকাণ্ডে জাপানের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন : প্রধান উপদেষ্টা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শুরু
 
বৈঠকে ড. ইউনূস জাপান সরকারকে বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ধারাবাহিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান, বিশেষ করে ‘বিগ-বি’ উদ্যোগ এবং মহেশখালী-মাতারবাড়ী একীভূত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগের (এমআইডিআই) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে জাপানের অবদানকে তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে উভয় পক্ষ ‘অর্থনৈতিক সংস্কার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা জোরদারকরণে উন্নয়ন নীতিগত ঋণ’ এবং ‘জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের মধ্যে ডাবল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প (পর্ব ১)’ শীর্ষক ঋণচুক্তির বিনিময় নোট স্বাক্ষরকে স্বাগত জানায়।

আজকের বৈঠকে দুই দেশের নেতা একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও সহযোগিতা স্মারক (এমওসি) স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান।

এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু, প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন, ব্যাটারিচালিত সাইকেল তৈরির কারখানা স্থাপন, তথ্য নিরাপত্তার পাইলট প্রকল্প চালু এবং বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিএসইজেড) সঙ্গে জমি চুক্তি, যা জাপানি বিনিয়োগে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) পারস্পরিক সুবিধাজনকভাবে সম্পন্ন করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। দুই পক্ষ নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও আলোচনাকারী দলগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন : শিগগিরই চালু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসার সাক্ষাৎকার

এ ছাড়া তারা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তা (ওএসএ) কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি টহল নৌকা দ্রুত সরবরাহ করা। তারা ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি স্থানান্তর সম্পর্কিত চুক্তি’ বিষয়ে মূলত সম্মত হয়েছেন এবং এটি দ্রুত চূড়ান্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উভয় পক্ষ দক্ষ মানবসম্পদ বিনিময়সহ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে, ড. ইউনূস বাংলাদেশে মানবসম্পদ উন্নয়নে জাপানের সহায়তা, বিশেষ করে ‘ম্যানপাওয়ার উন্নয়ন স্কলারশিপ প্রকল্প’-এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এ সময় ড. ইউনূস জোর করে বাস্তুচ্যুত এই জনগণের জন্য, বিশেষ করে ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

জাপান এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে মিয়ানমারে এই জনগণের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক বলে উভয় নেতা মত দেন। তারা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা এবং জাপানবাসীর উষ্ণ আতিথেয়তা ও অভ্যর্থনার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সুবিধাজনক সময়ে প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।