সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ‘সান্ডা’ কী, হঠাৎ কেন আলোচনায়?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন ইস্যু, নতুন ট্রেন্ড লেগেই থাকে যেন। কখন কোন ট্রেন্ড যে শুরু হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এখন ফেসবুকে ভিডিও, রিলস, স্ট্যাটাস স্ক্রল করলেই দেখা যায় সান্ডার উপস্থিতি। শুধু সান্ডা নয়, এখন ‘কফিলের ছেলে’ ট্রেন্ডও বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে ‘সান্ডা’ কী, হঠাৎ কেন আলোচনায়? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকেরই মনে।
জানা গেছে, ‘কফিলের ছেলে’ এবং ‘সান্ডা’ শব্দ দুটির মধ্যে গভীর সম্পর্কে আছে। ‘কফিল’ শব্দটি দিয়ে বোঝায়, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাকে, তাদের মালিককে। তাদের ছেলেদেরকেই বলা হয় ‘কফিলের ছেলে’। কফিলের ছেলে কেমন, কী খায়, কী পরে ইত্যাদি ঘিরে এখন নানা রসিকতা ও আলোচনা চলছে ফেসবুকে। মজার ব্যাপার, এ আলোচনার সঙ্গে জড়িয়ে ‘সান্ডা’ নামক একটি প্রাণী।
আরও পড়ুন: সান্ডা খাওয়া কি হারাম না হালাল?
‘সান্ডা’ ও ‘কফিলের ছেলে’ ট্রেন্ড জনপ্রিয় করার পেছনে আছে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি ভ্লগারের ভিডিও। তারা সৌদি আরবের মরুভূমিতে কাজ করেন, কাজের ফাঁকে ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করেন ফেসবুকে। তাদের মধ্যেই একজন জনপ্রিয় ভ্লগার হলেন আবদুল মান্নান। ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি সৌদি আরবের দাম্মামে থাকেন এবং পেশায় ছাগল, উট ইত্যাদি চরান। তার ভিডিওতে প্রায়ই দেখা যায় গাধা, উট, ছাগল আর কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা লিজার্ড। যাকে সবাই বলছেন ‘সান্ডা’।
আবদুল মান্নানের একটি রিলসে দেখা গেছে, একটি সান্ডা ফোঁসফোঁস করছে। তিনি বলছেন, ‘ও ভাইরে ভাই... সাপের মতো ফঁস ফঁস করে, দেখেন, ওয়াও, অসাধারণ!’ এটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গে সান্ডা ফোঁস করে ওঠে। ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৬.৮ মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখেছেন। যেভাবে ভিউ বাড়ছে, শীঘ্রই এই ভিডিও ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে। তারপর থেকে শুরু হয়ে গেছে সান্ডা নিয়ে আলোচনা।
সান্ডা কী
ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী, ‘সান্ডা’ আসলে স্পাইনি টেইলড লিজার্ড বা কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা টিকটিকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইউরোমাস্টিক্স (Uromastyx)। এটি অ্যাগামিডি (Agamidae) গোত্রের অন্তর্গত, এর এক ডজনের বেশি প্রজাতি রয়েছে। এভাবে ‘সান্ডা’ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীর নাম নয়। মরু অঞ্চলে বাস করা এই গোত্রের বেশ কয়েকটি প্রজাতিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘দব’। মরুভূমিতে বসবাসকারী এই গোত্রের লিজার্ডদেরই সাধারণভাবে ‘সান্ডা’ বলা হয়।
সাধারণত উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। সৌদি আরবের মরুভূমি এদের অন্যতম প্রাকৃতিক আবাসস্থল। দিনের বেশিরভাগ সময় এরা রোদ পোহায় এবং সন্ধ্যা হলেই গর্তে ঢুকে পড়ে। বিপদ টের পেলে পাথরের খাঁজে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই এরা গাছের পাতা বা ফলমূল খায়। মাঝেমধ্যে ছোট পোকামাকড়ও খায় এরা।
সান্ডা সরীসৃপের শরীর গিরগিটির মতো। তাপমাত্রা ও ঋতুভেদে এরা রঙ বদলাতে পারে। ঠান্ডায় এদের গায়ের রঙ গাঢ় হয়, যাতে সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করতে পারে। গরমে শরীরের রঙ হালকা হয়। এভাবে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এরা বেঁচে থাকে।
মরুভূমির বেদুঈন বা স্থানীয় গোষ্ঠীর মানুষ এই সান্ডা ধরেন এবং কেউ কেউ এগুলো খান। কেউ কেউ সান্ডার বিরিয়ানিও রান্না করেন।