যেমন উপাচার্য চান শাবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। এদিকে সরকার পতনের পর একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, প্রভোস্ট সহ বিভিন্ন পদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ ৷ গুরুত্বপূর্ণ এসব পদের পদত্যাগের ফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দীর্ঘদিন যাবত স্থবির রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে হতাশা আর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে ফিরতে না পারায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে দিনদিন আবাসিক হলগুলোতেও বাড়ছে নিরাপত্তার শঙ্কা।

কবে ফিরে পাবে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তা নিয়েও প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে কেমন হবে উপাচার্য তা নিয়েও বেশ জল্পনা কল্পনা করছেন শিক্ষার্থীরা। একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের দাবি উপাচার্য হতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক ও শিক্ষার্থীবান্ধব, যার নেতৃত্বে শুধু দেশেই না আন্তর্জাতিক পর্যায়েও শিক্ষার গুণগত মান ভূয়সী প্রশংসিত হবে।  

বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শফিক প্রধান বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি আমাদের একটি রাজনীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, এবং শিক্ষার্থী বান্ধব উপাচার্য প্রয়োজন। বর্তমান শিক্ষা ও প্রশাসনিক পরিবেশের উন্নতির জন্য এমন একজন ভিসি দরকার যিনি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে নৈতিকতার মান বজায় রেখে কাজ করবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে।  আমরা চাই এমন একজন উপাচার্য যিনি আমাদের শিক্ষার ও গবেষণার মান বৃদ্ধিতে মনোযোগী হবেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করবেন। 

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ মিয়া বলেন, আমরা এমন একজন ভিসি চাই যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করবেন না। এমন ভিসি চাই না যিনি রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভিন্ন মতের মানুষকে দাবিয়ে রাখবে যেমনটা পূর্বে লক্ষ্য করা যেত। যাঁর প্রধান লক্ষ্যই থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা। আমি এমন একজন ভিসি চাই যিনি গবেষণা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হবেন, গবেষণায় প্রয়োজনীয় ল্যাব ফেসালিটিজের দিকে গুরুত্ব দিবেন। যিনি কোন দুর্নীতি করবেন না, দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দিবেন না এবং সবকিছুতেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করবেন। ভিসি হবে এমন যিনি দলের ঊর্ধ্বে উঠে সৎ যোগ্য মানুষকে যথাস্থানে নিয়োগ দিবেন। তাতেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। 

ইংরেজি বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাকিব মিয়া বলেন, আমরা এমন একজন উপাচার্য চাই, যিনি হবেন নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। যার মতাদর্শ কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও একাডেমিক পর্যায়ে রুল মডেল হিসেবে তৈরি করবেন।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীর বলেন, প্রথমত শাবিপ্রবিতে আমরা এমন একজন উপাচার্য চাই যিনি হবেন শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন। দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন। আমরা এমন একজন উপাচার্য চাই যার নেতৃত্বে সারা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জিত হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, উপাচার্য হিসাবে একাডেমিক এক্সিলেন্স, সৎ ও নৈতিকতা সম্পন্ন, প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ এবং শিক্ষার্থী বান্ধব হতে হবে। একাডেমিক এক্সিলেন্স না থাকলে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারবেন না, ঠিক তেমনি প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ না হলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন না।


সর্বশেষ সংবাদ