এএসপি সেজে তরুণীদের ফাঁদে ফেলে লাখ টাকা আদায়

রাজ আল আবির
রাজ আল আবির  © ফাইল ছবি

সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতেন গাজীপুরের যুবক রাজ আল আবির। এরপর তাদেরকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।

ভুয়া এএসপি পরিচয়ধারী ওই যুবককে গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন তরুণী তার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। এর মধ্যে ৩ তরুণীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে ডিবি। এই তিনজনের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আবির।

ডিবি জানিয়েছে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর চাকরির জন্য খুব একটা চেষ্টা করেননি আবির। নানা সমস্যা নিয়ে পুলিশের কাছে যায় সাধারণ মানুষ। আর এই বিষয়টি নিয়েই প্রতারণার চিন্তা তার মাথায় আসে।

ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে ঘনিষ্ঠ হয়ে গোপনে ছবি ভিডিও ধারণ করতেন আবির। এরপর তাদের কাছ থেকে আদায় করতেন লাখ লাখ টাকা। দেড় বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানের তরুণীদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের নিশ্চিতপুর গ্রামের এই যুবক।

ডিবি জানায়, আবির পুরোনো একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। সেই গাড়িতে ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো থাকত। সব সময় নিজের সঙ্গে পিস্তলের মতো দেখতে একধরনের লাইটার রাখতেন তিনি। এ ছাড়া পুলিশের আচরণ, শরীরী ভাষা, কিছু আইনকানুন জানা—এসবও আয়ত্ত করেছেন।

রাজধানীর কাফরুলের পূর্ব শেওড়াপাড়ায় ১৫ হাজার টাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন আবির। সেখানকার স্থানীয় লোকজন তাঁকে এএসপি হিসেবে জানতেন। যে ফ্ল্যাটে তিনি থাকতেন, সেখানে কিছুদিন পরপর স্ত্রী পরিচয়ে তরুণীদের নিয়ে আসতেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে আশপাশের লোকজন তা ডিবিকে জানান। ডিবি আবিরের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৯টি এটিএম কার্ড ও এএসপি নামধারী ৩০টি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করেছে।

আবিরের প্রতারণার শিকার তিন তরুণীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে ডিবি। ওই তিন তরুণীর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এক তরুণীর কাছ থেকে ৫ লাখ, কক্সবাজারের এক তরুণীর কাছ থেকে ৩ লাখ ও বরিশালের এক তরুণীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের তরুণী খুলশী থানায় প্রতারণার অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার আবিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ডিবির ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবির বলেছেন, তরুণীদের ফাঁদে ফেলার পাশাপাশি মাদক কারবারিদের ধরে এনে মামলার ভয় দেখাতেন তিনি। তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করতেন। জমি ও ফ্ল্যাটের বিরোধ মেটানোর নাম করে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আর এএসপি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে পণ্য কিনতেন।

বিভিন্ন আইনের বই পড়ে তিনি এ বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলসদৃশ লাইটার দেখতে আসল পিস্তলের মতো। ওই পিস্তল সঙ্গে নিয়ে তিনি চলাফেরা করতেন, মানুষকে ভয় দেখাতেন।


সর্বশেষ সংবাদ