০৮ জুলাই ২০২৫, ১৯:৪৫

৬ মাসে ২৯ সাইবার ক্রাইম, ভুক্তভোগীর ৯৭ ভাগই নারী ও শিশু

সিএসডব্লিউসি’র লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে সাইবার এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠনগুলোর জোট সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি)। সংগঠনটির তথ্যমতে, প্রথম ছয় মাসে মোট ২৯টি সাইবার সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, এবং পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট ছড়ানোসহ একাধিক স্তরে সংঘটিত অপরাধের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

আজ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠনগুলোর জোট সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি) থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সিএসডব্লিউসি জানায়, মার্চ ও এপ্রিল মাসে সর্বাধিক ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৯টি ও ১০টি, যা মোট ঘটনার ৬৫ শতাংশেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকা শহরে ১৩টি, যা দেশের ডিজিটাল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ নারী, ২১ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাশিশু এবং ৩ শতাংশ পুরুষ ছিলেন। পেশাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ, এরপর গৃহিণী ২০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশাজীবী যেমন এনজিও কর্মী, ব্যবসায়ী, বিক্রয়কর্মী। বাকি ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভুক্তভোগীর পেশা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: আন্দোলন দমন হলেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন— সাংবাদিকদের বলেছিলেন মোহাম্মদ এ আরাফাত

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ শতাংশেরও বেশি ঘটনায় একাধিক অপরাধ একসঙ্গে সংঘটিত হয়েছে, যেমন ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ, ব্ল্যাকমেইল এবং ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট ছড়ানো। সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো- কিছু ঘটনায় ৮ ও ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার মতো নৃশংসতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অন্তত একটি ঘটনায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি করা হয়েছে, যা ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সিএসডব্লিউসি’র মতে, এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠছে।

সিএসডব্লিউসি বলছে, নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন একদিকে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে অপরাধীদের হাতে তা হয়ে উঠছে ভয়ংকর অস্ত্র। সাইবার ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, ভুক্তভোগীদের গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

আরও পড়ুন: পরীক্ষা দিতে এসে ধরা খেলেন ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশের কাছে হস্তান্তর

প্রসঙ্গত, সাইবার অপরাধে নারী ও শিশুদের ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উদ্যোগে গঠিত হয়েছে সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি)। ১৪টি সংগঠনের এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ব্লাস্ট, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) এবং সদস্য সচিব নারীপক্ষ। অন্যান্য সদস্য সংগঠনের মধ্যে রয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্র্যাক, আর্টিকেল নাইনটিন, অরোধ্য ফাউন্ডেশন, দ্য টেক একাডেমি, বিআইজিএফ, আইআইডি, ডিজিটালি রাইট লিমিটেড, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সাইবার টিনস ও এইচআরএসএস।