২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২১

শীতের আগমনে ফুলচাষে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা

ফুল চাষ   © সংগৃহীত

শীতের আগমনী হাওয়ায় আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে ‘ফুলের রাজ্য খ্যাত’ যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল। মাঠে মাঠে রঙিন ফুলের চারা, কুয়াশা ভেদ করে চাষিরা ব্যস্ত চাষে, চারদিকে ছড়িয়ে আছে ফুলের গন্ধ আর উৎসবের আমেজ। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমকে বলা হয় ফুলের ভরা সময়, তার প্রস্তুতি এখন পুরোদমে চলছে।

চাষিরা এখন সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত বীজতলা তৈরিতে, জমিতে সেচ ও পরিচর্যায়। আগাছা নিড়ানো, স্প্রে করা, মরা গাছ তুলে ফেলা সব মিলিয়ে ফুলের মৌসুমকে সামনে রেখে চলছে পরিশ্রমের প্রতিযোগিতা। কারণ, আসন্ন বিজয় দিবস, নববর্ষ, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসের বাজার ধরাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এবারের মৌসুমে গদখালীর মাঠে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ করেও চমক দেখিয়েছেন কয়েকজন চাষি।

টিউলিপ চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, টিউলিপ মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। এটি চাষে সাধারণত ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এমন আবহাওয়া বাংলাদেশে বিরল হলেও, গদখালীর অনুকূল মাটি ও শীতকালের হালকা ঠান্ডা এই ফুল চাষে আশাব্যঞ্জক সাড়া দিয়েছে। স্থানীয় কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ে গদখালী হতে পারে নতুন দিগন্তের সূচনা।  

আরও পড়ুন : গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সভা আজ, তারিখ কি নির্ধারণ হবে?

এদিকে ফুলের ভরা মৌসুমকে সামনে রেখে বাজারেও শুরু হয়েছে সরব প্রস্তুতি। গদখালী ফুলবাজারে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার ফুল। পাইকাররা আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা দরে, রজনীগন্ধা ৬ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২–১৫ টাকা, আর জারবেরা ১২–১৪ টাকায়।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোর অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি ১২ শতাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করেন। দেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই সরবরাহ হয় এখান থেকে।

চলতি বছরের গ্রীষ্মে অতিবৃষ্টি ও তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিদের মনে নতুন আশার আলো। তারা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে এই মৌসুমে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।  

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এখন এখানে বিদেশি কিছু ফুলও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে। এই ফুলচাষের সঙ্গে প্রায় এক হাজার কৃষক এবং ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক সরাসরি যুক্ত। বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফুল কেনা-বেচা হয় এই অঞ্চলে। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি, যেন ফুলের বাগানের পরিধি দিন দিন আরও বাড়ে।  

সব মিলিয়ে শীতের শুরুতেই আবারও রঙে রঙে ভরে উঠছে গদখালী। মাঠজুড়ে ফুটতে শুরু করেছে নতুন আশার ফুল। এর মাঝে টিউলিপের পাপড়িও হয়তো লিখে দেবে বাংলাদেশের ফুলচাষে এক নতুন অধ্যায়।