ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দই বিক্রি করে সফল উদ্যোক্তা আসাদ

খামারের গরুর দুধ থেকে তৈরি দই বিক্রির জন্য কৌটায় ভরছেন এস এম আসাদ
খামারের গরুর দুধ থেকে তৈরি দই বিক্রির জন্য কৌটায় ভরছেন এস এম আসাদ  © সংগৃহিত

ব্যবসায় প্রশাসন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এস এম আসাদ। পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি ইস্টার্ণ ব্যাংকে ২৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরিও নেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তাই ঝুঁকি নিয়ে ছেড়ে দেন ব্যাংকের চাকরি, শুরু করেন গরুর খামার। গরুর দুধ থেকে তৈরি দই তিন বছর ধরে বিক্রি করছেন সাবেক এই ব্যাংকার। সবাই এখন ‘সয়েল মিল’ নামের দইয়ের আসাদ নামে চেনে তাকে।

শুধু দই বিক্রি নয়, আসাদ এখন এলাকার শিক্ষা বিস্তারে একটি হাইস্কুল, যুবসমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে ব্যায়ামাগার চালান কয়েক বন্ধুকে নিয়ে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পাঠাগার চালুর কাজ শুরু করেছেন নিজ এলাকায়। করোনায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। ২০২০ সালের মে থেকে এ পর্যন্ত ৬৪৩ জনকে সেবা দিয়েছেন আসাদ।

আসাদ জানান, এমবিএ পাস করে গরুর খামার করছেন শুনলে বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নানা কথা শুনতে হতো। এমনকি পরিবারের লোকজনও তার জন্য আফসোস করত। এত পড়াশোনা করে ছেলে এসব কী করছে। মেজ বোন সেলিনা সুলতানা ও বন্ধুদের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে নগরের দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেয়াবাদে নিজ বাড়ির আঙিনায় ৪টি গরু দিয়ে শুরু করেন খামার। তিন বছরের মাথায় গরু হয় ১১টি। দই বিক্রির টাকায় পরিশোধ করেছেন ঋণও।

আরো পড়ুনঃ সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা

শুরুতে গরু দেখাশোনা, দোকানে দোকানে গিয়ে দই বিক্রি করতেন আসাদ। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় রেখেছেন কর্মচারী। কিন্তু কেউ না থাকলে আসাদ নিজেই এখনো দই নিয়ে হাজির হন দোকান, কমিউনিটি সেন্টার কিংবা অনুষ্ঠানে।

আসাদ বলেন, ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বন্ধুরা গ্রুপ তৈরি করে বিনামূল্যে রক্ত দান করতেন। এ পর্যন্ত নিজে ৩৯ বার রক্ত দিয়েছেন। ব্যাংকের চাকরির মাস শেষে বেতন। সারাদিন ব্যস্ত থাকায় অন্যের জন্য কাজ করার সুযোগ কম। সমাজে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ যাতে পান, তাই ঝুঁকি নিয়ে শুরু করেন গরু পালন। বাজারের দইয়ে মানুষের আস্থা কম। তাই নিজের খামারের দই বিক্রি শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, মাসে ছয় লাখ টাকার দই বিক্রি হয় তার খামারের। বছরে আসে ৭২ লাখ টাকা। পবিত্র রমজান মাস ও গ্রীষ্মকালে চাহিদা বেশি থাকে। পুরো বছরে খরচ বাদ দিয়ে তার ছয় লাখ টাকার বেশি আয় হয়। শুরুতে দোকানে দোকানে গিয়ে যখন দই বিক্রি করতেন, অনেকেই নানাভাবে কটূক্তি করতেন। এত পড়ালেখা করে আবার দই বিক্রি। মন খারাপ করতেন। কিন্তু নিজেকে বেশিক্ষণ সেই মন খারাপে আটকে রাখতেন না আসাদ। নিজের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে থাকেন।

আসাদের সাফল্য দেখে তার কাছে এখন অনেক শিক্ষিত ছেলে আসেন পরামর্শের জন্য—কীভাবে উদ্যোক্তা হবেন। 

আসাদ বলেন, আগে যাঁরা বাঁকা চোখে দেখতেন, তারাই এখন বাহবা দেন। কোনো কাজই ছোট নয়। তার দইকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি আয় থেকে সমাজের জন্য আরও কিছু করা তার স্বপ্ন।


সর্বশেষ সংবাদ