০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৩৬

ডাকসুতে সুইং ভোটাররা ‘কিং মেকার’ ভূমিকা পালন করবে: ঢাবি রিসার্চ সোসাইটি

ডাকসু নিয়ে নির্বাচনের জরিপ প্রকাশ করেছে ঢাবি রিসার্চ সোসাইটি  © টিডিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে এক সপ্তাহব্যাপী জরিপ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটি। জরিপের গবেষকের মতে, সিদ্ধান্তহীন শিক্ষার্থীদের (সুইং ভোটার) ভোট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ‘কিং মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের ভোট কোন দিকে যাবে, তা শেষ মুহূর্তে ফলাফল পাল্টে দিতে পারে।

রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটি।

জরিপের গবেষক মো. ফাহিম হাসান মেহেদী জানান, প্রথমত, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি ছাত্ররাজনীতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করছে, যা প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভোট না দেওয়ার প্রবণতা মূলত আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটে নিহিত। যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়, তবে এই আস্থাহীনতা কাটানো সম্ভব। তৃতীয়ত, সিদ্ধান্তহীন শিক্ষার্থীদের (সুইং ভোটার) ভোট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ‘কিং মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের ভোট কোন দিকে যাবে, তা শেষ মুহূর্তে ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে।

গত ২৯ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০০ ভোটারের তথ্যের আলোকে জরিপটি করা হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ৯০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০৪ নারী ও ৩৯৬ পুরুষ শিক্ষার্থী, যেখানে ৪৯৫ আবাসিক শিক্ষার্থী ও ৪০৫ অনাবাসিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। 

নির্বাচনের তফসিল সম্পর্কে ধারণা আছে ৭০২ শিক্ষার্থীর, আংশিক অবগত আছেন ১৮৯, কিন্তু ৯ শিক্ষার্থীর তপসিল সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সাংবিধানিক ধারণা রাখেন ২৩০ শিক্ষার্থী, ধারণা রাখেন না ২৪৩ শিক্ষার্থী ও সামান্য ধারণা রাখেন ৪০৩ শিক্ষার্থী।

৮৫ শিক্ষার্থী মনে করেন ডাকসুর সংবিধান বাস্তবায়িত হবে, ২৯৬ জন মনে করেন আংশিক বাস্তবায়িত হচ্ছে, ১৬১ জন মনে করেন একেবারেই বাস্তবায়িত হচ্ছে না ও ৩৫৮ শিক্ষার্থী কোনো সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশ করেননি।

বয়সসীমা নিয়ে ৫৯৮ শিক্ষার্থী মনে করেন প্রার্থীর বয়স ২০-২৫ হওয়া উচিত, ১৫৩ শিক্ষার্থী মনে করেন ২৬-৩০ হওয়া উচিত ও ১১৯ শিক্ষার্থী মনে করেন বয়সসীমা থাকা উচিত নয়। ভোট প্রদানে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে ১১৮ শিক্ষার্থী, না দেওয়ার পক্ষে আছেন ২০ জন শিক্ষার্থী ও ভোট প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ৭৬৩ শিক্ষার্থী। 

কোন প্যানেল বেশি ভোট পেতে পারে? এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৩১০ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, শিবির সমর্থিত প্যানেলে ১৬৭ জন ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে ১৩১ জন। 

ভোট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন ১০২ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তিনটি প্রধান কারণ হলো: রাজনৈতিক হতাশা, অনাস্থা ও ভয় বা চাপ। এ থেকে বোঝা যায়, কিছু শিক্ষার্থীর নির্বাচনের প্রতি বিভিন্ন কারণে আস্থা নেই এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। 

ন্যায়পরায়ণতা ও ব্যক্তিত্বের আলোকে ভোট দেবেন ৫০৪ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীর নেতৃত্বের দক্ষতার আলোকে ভোট দেবেন ২৭৩ শিক্ষার্থী। ৩৫৩ শিক্ষার্থী মনে করেন আগামীতে ডাকসু হবে, ৩৬৮ জন শিক্ষার্থী আশাবাদী ও ১৭৯ জন মনে করেন আগামীতে ডাকসু হবে না।

জরিপে দেখা যায়, ২৩৯ জন শিক্ষার্থী মনে করেন ভোট স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, ২০৬ জন মনে করেন আংশিক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, ২৬৭ শিক্ষার্থী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছেন ও ১৭৪ জন শিক্ষার্থী মতামত দেননি।

৯০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪৫ শিক্ষার্থী মনে করেন নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে, ২২১ জন মনে করেন অনেক পরিমাণে হচ্ছে ও ১৬৬ জন কোনো মতামত দেননি। 

নির্বাচনকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে জরিপে দেখা যায়, ৬৩৩ জন শিক্ষার্থী মনে করছেন নির্বাচনের সময় ক্যাম্পাসে পরিবেশ অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে, ১৪৯ জন মনে করেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকবে ও ৮৯ জন মনে করেন ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয়ে উঠবে।