২৬ জুলাই ২০২৫, ১৯:৩৯

চবিতে শিক্ষক নিয়োগে নতুন ধারা: তিন ধাপের পরীক্ষার চালু

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার  © টিডিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে যুক্ত হলো নতুন ধাপ—লিখিত, মৌখিক ও প্রেজেন্টেশন। কোয়ালিটি গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, কেবল মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ যথাযথ নয়। এ জন্য শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় রদবদল এনে তিন স্তরে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে তারা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে তিনটি বিভাগে এ প্রক্রিয়ার আওতায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে এসে অনুধাবন করি যে, শিক্ষক নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না এবং শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যোগ্য শিক্ষক নিযুক্ত হচ্ছে না। ফলে আমরা কোয়ালিটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারছি না। এ জন্য আমরা সিন্ধান্ত নিই যোগ্য শিক্ষক দেব। সে জন্য সরকারি শিক্ষা সংস্কারের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ৫৫৮তম সিন্ডিকেটে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় রদবদল করেছি।’

মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘এই রদবদল করার আগে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রভাষক নিয়োগ করা হতো। সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে এসে লিখিত, মৌখিক ও প্রেজেন্টেশন এই তিন রকম পরীক্ষা স্তরের মধ্য দিয়ে যারা ভালো করবে, তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিন্ধান্ত সিন্ডিকেটে পাস করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আমরা আজ শনিবার (২৬ জুলাই) তিনটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। এর আগে গত ২৪ ও ২৫ তারিখ দুটি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও যদি যোগ্য শিক্ষক না পাই, তাহলে আমরা আবার বিজ্ঞাপন দিয়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করব।’

আরও পড়ুন: এইচএসসির আইসিটি খাতা দেখবেন ইসলাম-ইতিহাস ও দর্শনের শিক্ষকরা

শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা রদবদলের কারণ সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা এ সিন্ধান্ত নিয়েছি যে, প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন স্তরে পরীক্ষা দিতে হয়। অন্যান্য পরীক্ষায়ও এমন নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে আমরা অনার্স-মাস্টার্স এবং এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছি, সেখানে শুধু একটি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া আমরা যৌক্তিক মনে করি না। এটার অভিজ্ঞতাও ভালো না। আগে এসব পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেন হয়েছে, রাজনৈতিক প্রকাপ কাজ করেছে। সেখানে যোগ্যরা অনেক ক্ষেত্রেই উঠে আসতে পারিনি। এমন রেকর্ড ডকুমেন্টেড রয়েছে। টিআইবির রিপোর্টও আছে।’

পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা আবেদন করবেন, তাদের নির্দিষ্ট তারিখে প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হবে। লিখিত পরীক্ষা ৫০ নম্বর এবং এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। এতে যারা ৬০ শতাংশ মার্ক পাবে, তাদের আমরা প্রেজেন্টেশন এবং মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেব। প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষা যুক্ত করার কারণ হচ্ছে, শুধু মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ দিলে প্রার্থীর আর্ট অব ডেলিভারি, তার অ্যানালিটিক্যাল স্কিল এসব পরীক্ষা করা যেত না। সে হয়ত ভালো করে পড়াশোনা করেছে, ভালো ফলাফল করেছে, কিন্তু সে ভালো শিক্ষক হবে এই নিশ্চিয়তা দেওয়া যায় না।’

আরও পড়ুন: নটর ডেমসহ রাজধানীর তিন কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘এখন আমি শুনে আনন্দিত হয়েছি যে, যেমন রাঙামাটি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লিখিত পরীক্ষায় ফিরে এসেছেন। অন্যরা আসবেন কি না, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শিক্ষক নিয়োগ দেব।’

প্রসঙ্গত, নতুন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই)। এদিন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পেতে চারজন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পেতে অংশ নেন ২৯ জন। আর আজ শনিবার (২৬ জুলাই) ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ৪২ প্রার্থী।