জাবিতে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট পাস, বেতন-ভাতাতেই বরাদ্দ ৫৬ শতাংশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মূল বাজেট এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট পাস হয়েছে। মূল বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ও ৩৩৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। গত বছরের ন্যায় চলতি অর্থ বছরেও মোট বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়ে।
২৮ জুন (শনিবার) বিকেল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২-তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট ও ২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেতন-ভাতা বাবদ সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫৬.২৪ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৮৯ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে- ৭২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। এ খাতে মোট বাজেটের ২৩.৩১ শতাংশ খরচ হবে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দে ছিল ৬৬ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা- ২২.৬০ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে। এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ যা মোট বরাদ্দের ১১.৯৯ শতাংশ। চলতি বছর এ খাতে ৩১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা অর্থাৎ ১০.০২ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।
গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা যা মোট বরাদ্দের ২.৮৫ শতাংশ। চলতি বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লক্ষ-মোট বরাদ্দের ২.২৬ শতাংশ। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা খাতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকায় যা মোট বরাদ্দের ০.১৪ শতাংশ। এটি এবছর ছিল ৪৫ লক্ষ টাকা-০.১৫ শতাংশ। যানবাহন ক্রয় বাবদ প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বাজেটের ০.৭১ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে প্রাপ্ত ফিস বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩ কোটি ৭১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লক্ষ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস হতে আয় ১০ কোটি ১৫ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে মোট নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।
বাজেট পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতের বরাদ্দ ৭ লক্ষ ২২ হাজার টাকা থেকে ৯ লক্ষ ২৩ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাজেটে যানবাহন ক্রয় খাত থেকে ১টি মাইক্রোবাস ও ১টি এ্যম্বুলেন্স, ১টি এসি কোস্টার ও ১টি বড় বাস ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ১ কোটি টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বৈদ্যুতিক লাইনসমূহ পুনঃ স্থাপনের জন্য বাজেটে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিটি (আরএফআইডি) স্থাপন বাবদ সংশোধিত বাজেটে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পাঁচ দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমপুঞ্জিত বাজেট ঘাটতি দাড়িয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য থেকে জানা গেছে- চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সে হিসেবে চলতি বছরের ৩০ জুনের পর বাজেট ঘাটতি পৌঁছাবে ১০০ কোটিতে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট ছিল ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা ও ২০২১—২২ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ কোটি ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা।
বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটের জন্য ৪১৫ কোটি ৭৮ লক্ষ ১ হাজার টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের ৪৩৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার মূল বাজেট ইউজিসিতে পাঠানো হয়। ইউজিসি ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটে ৩৩৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের মূল বাজেটে ৩২৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমান ৮০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে একটি কল্যাণমুখী বাজেট প্রস্তুত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ব্যতীত গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, গাড়ি ভাড়া, রোড ট্যাক্স ইত্যাদি বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও জাবি স্কুল ও কলেজের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই দুটি খাত আমাদের বাজেট ঘাটতি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। এর বিপরীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো খাত নেই।