দশম গ্রেডসহ তিন দাবি নিয়ে আলোচনা করতে মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ তিন দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এরইমধ্যে এসব দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেছেন শিক্ষক নেতারা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার ফেসবুকে একাধিক ছবি পোস্ট দিয়ে শামসুদ্দিন মাসুদ লিখেছেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে...।’ এর আগে এক পোস্টে লেখেন, ‘আমি বাস্তববাদী মানুষ। যা সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জেনে-বুঝে জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেব।’
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত তিন দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরও সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কর্মবিরতি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলবে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত।
এর আগে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেরা বেগম বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেড দেওয়া, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন—এই তিন দফা দাবির বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আশ্বাসের বাইরে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছি।’
ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অনশনে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। রাতে প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শাহীনূর আকতার বলেন, ‘৩ দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় কর্মসূচি জোরদার করতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর আমরা সংবাদ সম্মেলন করে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে সরকার কোনো উদ্যোগ দেখায়নি। তাই সারা দেশের সহকারী শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান—ন্যায্য তিন দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি সফল করুন।’
আরও পড়ুন: পিএসসির চিফ ইন্সট্রাক্টর নিয়োগে অভিজ্ঞতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন, রিট করে ৩৬ জনের সুযোগ
সংগঠনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, দাবি পূরণ না হলে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনসহ আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অনশন শুরু করবেন সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক ৩ লাখ ৮৪ হাজার।
গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডের শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট।
তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি নিয়েই দশম গ্রেড পাচ্ছেন। অথচ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি সিএনএড, বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও এখনো ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন।