‘জকসু নির্বাচন পেছাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ অভিযোগ শিবির ও ছাত্রশক্তির প্রার্থীদের
আসন্ন ২২ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন পেছাতে সুনির্দিষ্ট একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির ও ছাত্রশক্তি নেতারা। আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পৃথক স্ট্যাটাসে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
ছাত্রশিবির সভাপতি ও ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের’ ভিপি পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে একটা পক্ষ। নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দেখানো পথে হাঁটছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিক আত্মমর্যাদার প্রশ্ন।
তিনি দাবি করেন, বছরের পর বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। এখন যখন সব ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার বুঝে নিয়েছে, তখনই একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থে নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এর আগেও নির্বাচন কমিশন একটি পক্ষকে খুশি করতে ২৬ দিন পিছিয়েছে নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা এমন অপচেষ্টা রুখে দেবে।
এ বিষয়ে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ও ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের’ জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন কোনো গোষ্ঠীর খেয়াল খুঁশির বিষয় নয়, এটা জবিয়ানদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন। এই নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের আত্মমর্যাদা জড়িত।নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টা মানে শিক্ষার্থীদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া। শহীদ সাজিদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বেইমানি করা। শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করবো না ইনশাআল্লাহ। শেষে তিনি যোগ করেন-‘অসত্যের কাছে কভু নত নাই করি শির ভয় কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।’
আরও পড়ুন : জকসুতে ছাত্রদল সমর্থিত জিএস ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থীকে শোকজ
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ও ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের’ জিএস পদপ্রার্থী ফয়সাল মুরাদ জকসু নির্বাচন পেছানোর প্রচেষ্টা নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লিখেন, যে বা যারা ষড়যন্ত্র করছেন, সাবধান হয়ে যান। নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে় নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করবেন না।
তিনি জানান, অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে দিনের পর দিন আন্দোলন করার পর জকসুর নীতিমালা পাশ হয়েছে। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হতে হবে, শিক্ষার্থীরা যাকে ইচ্ছা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
একই প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী শাহিন মিয়া বলেন, একটি দল তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নির্বাচন পেছানোর পায়তারা করছে। আমরা দেখেছি একটি দল প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে আগের ডেট পিছিয়ে ২২ ডিসেম্বর করেছিলো। তারা চাচ্ছে কোন একটা অযুহাত দেখিয়ে জকসু নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের পরে নিতে। কমিশনের নিকট দাবি জানাই ২২ ডিসেম্বরেই নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্নর জন্য।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার হয়। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৩ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২৪, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে।
এ ছাড়া ২৭ ও ৩০ নভেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করার সিধান্ত গৃহীত হয়। ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রত্যাহারকৃত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৯ ডিসেম্বর। ৯ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। আর ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনই ভোট গণনা ও ২২ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়। তবে ভূমকম্পে আতঙ্কিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করাতে আগামী ২৭ ও ৩০ নভেম্বর ডোপ টেস্ট স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে উদ্যোগ প্রকাশ করছে প্রার্থীরা।