৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৫

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগ অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে উদ্বেগজনক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোগো   © ফাইল ফটো

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও তার দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার (৩০ আগস্ট) সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ গণমাধ্যমে পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যৌথবাহিনী হামলা চালায়। এতে জুলাই অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ তার দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

‘ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, যিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, আবরার ফাহাদ হত্যা বিরোধী আন্দোলনসহ সব ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোদ্ধা। একই সঙ্গে তিনি অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ছিলেন কারাবন্দি ও নির্যাতিত। অথচ অভ্যুত্থানোত্তর নয়া বাংলাদেশে এমন একজন যোদ্ধার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ঘটনা আমাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ভয়ংকর দমন-পীড়নের দিনগুলোর স্মৃতিও মনে করিয়ে দিচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, এ ঘটনার দায় হাজারও শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশেরই অংশ এবং একই সঙ্গে এটি জুলাই ছাত্র-জনতার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।’

গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন মহল নানা মোড়কে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার অন্যতম অংশ জাতীয় পার্টি। এমনকি মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্টও এই ফ্যাসিস্ট সহযোগীকে নানাভাবে সাপোর্ট দিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, আজ অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসন ও সেনাবাহিনী কর্তৃক জাতীয় পার্টির অফিস পাহারা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রেরই অংশ। মনে রাখতে হবে, এই জাতীয় পার্টি গত দেড় দশকে বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারকে বৈধতা দিয়েছে এবং একই সঙ্গে গুম, খুন ও নানা অন্যায়ের সহযোগী হয়েছে। অর্থাৎ তারা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অন্যতম দোসর। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো যদি-কিন্তু ছাড়াই স্পষ্টভাবে বলতে চায়, জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা আর কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয় এবং প্রাসঙ্গিক হতেও দেওয়া হবে না।

এতে বলা হয়, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা কেবল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য, জুলাই যোদ্ধাদের ওপর বলপ্রয়োগের জন্য নয়। এ ছাড়া আজকের ঘটনাসহ সম্প্রতি নানা আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগের একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা অভ্যুত্থানোত্তর নয়া বাংলাদেশে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানকাল এবং অভ্যুত্থান-পূর্ব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলে পুলিশ বাহিনীকে ঘিরে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ রাজনৈতিক নিপীড়নের অসংখ্য অভিযোগ ছিল। তাই অভ্যুত্থানোত্তর সময়ে অন্যতম জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল পুলিশ সংস্কার। কিন্তু পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশি সংস্কারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, অতিদ্রুত পুলিশ সংস্কারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিগগির কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বলেও জানানো হয়।