সাজিদ হত্যার বিচার চেয়ে ইবিতে মানববন্ধন, শিক্ষকদের সংহতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে এসময় উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইবি ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন এবং সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান, জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, গ্রীণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
এছাড়াও শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক এস এম সুইট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি শামীম, শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের মনের কষ্ট আমরা হয়তো প্রকাশ করতে পারছি না। আজকে ১৪৫ দিন হয়ে গেছে কিন্তু হত্যার কোন বিচার নাই৷ আপনারা যদি বিচার করতে না পারেন তাহলে সেটা স্পষ্ট বলে দেন। কি গ্যারান্টি আছে যে আজকে আমি, আপনি খুন হলে আমার পরিবার ন্যায় বিচার পাবে? আপনারা যদি বিচার করতে না পারেন তাহলে আমরা বিচার চেয়েই যাবো এবং আপনাদের গদি নড়ে যাবে। আমরা আর কোন কথা শুনতে চাইনা, আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই।
জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি প্রমাণিত যে সাজিদ আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। সাজিদ হত্যাকাণ্ডকে আপনারা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন সেটাই আগে আমাদের দেখার বিষয়। যদি আপনারা গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখতেন ই তাহলে কেন আপনারা তদন্তকারী সংস্থাকে চাপ প্রয়োগ করছেন না। কেন আপনারা সাজিদের বাবা, মা, বোনকে সান্ত্বনার বাণী শোনাতে পারছেন না। যেদিন সাজিদের খুনিদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে দেখবো সেদিন আমরা শান্ত হবো৷
ইবি ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পড়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে আর তার জন্য আমাদের শিক্ষকদের মাঠে নামতে হবে এটা কখনো ভাবিনি। সাজিদ আব্দুল্লাহ নিজেও একজন জুলাই যোদ্ধা, আমরাও জুলাই যোদ্ধা। এইরকম একটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারিনা৷ ফ্যাসিস্ট আমলেও দিনে-দুপুরে খুন হতে পারে নাই, আমরা সবসময় সোচ্চার ছিলাম। আমাদের একটাই দাবি, অনতিবিলম্বে সাজিদের হত্যাকারীর বিচার করতে হবে।
সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেমন শরীক ছিলাম, আজকেও সেভাবেই শরীক হয়েছি। ১৪৫ দিন আগে হত্যাকাণ্ড হলেও অধ্যাবদি দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি চোখে পড়ে নাই। হয় ইচ্ছাকৃতভাবে এটিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে অথবা বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসন ব্যর্থ। যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয় তাহলে দায়ভার স্বীকার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা চিহ্নিত হয়েছে তাদের নাম প্রকাশে গড়িমসি করলে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সাথে আমরা সবসময় থাকব। বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম সংকটকালীন সময়ে আমি প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি৷ আমি জানি প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এদের শনাক্ত করা বেশি সময়ের ব্যাপার নয়। আমার মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার বিলম্বিত করা হচ্ছে।
জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিতে সাজিদ আব্দুল্লাহর মতো একজন কুরআনের হাফেজকে হত্যা করা হয়েছে। আমি দায়িত্বে থাকায় হত্যার বিচারের প্রত্যাশায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্ট জমা দেই। আমাদের আশা ছিল যতদ্রুত আমাদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে সাজিদ হত্যার বিচারও তত দ্রুতই হবে। হত্যার খুনিকে ধরতে ৬ মাস লাগা অনেক লম্বা সময়। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাবছে আদৌ বিচার হবে কিনা৷ হত্যাকারীদের ধরতে দেশের কোন সংস্থার ই এতদিন সময় লাগার কথা না। আমাদের ধরে নিতে হবে কেউ বা কারা তাদের স্বার্থে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, জুলাইয়ে যেমন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলাম, আজকেও বলছি, সাজিদ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকবো।