০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫০

ইকসুর গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে অনুমোদন

ইবির প্রধান ফটক  © সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কুষ্টিয়ার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০-এর ধারা ৪১ অনুযায়ী এই গঠনতন্ত্র পাস হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ অনুমোদনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নাম হবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু)’। এতে মোট ২৫টি পদ থাকবে, যার মধ্যে ২৩টি পদে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। উপাচার্য পদাধিকারবলে ইকসুর সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ পদাধিকারবলে সংসদের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

হল সংসদে থাকবে ১৫টি পদ। প্রাধ্যক্ষ পদাধিকারবলে সভাপতি ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেবেন। বাকি ১৩টি পদ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা
গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরাই ইকসু ও হল সংসদের ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত এবং দাপ্তরিকভাবে সদস্যপদ ফি প্রদানকারীরা ভোট দিতে পারবেন। এমফিল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ বছর। তারা মাত্র একবার ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন।

সান্ধ্যকালীন, এক্সিকিউটিভ, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, নাম কর্তন বা ডিগ্রি সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সংসদের সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না। তবে নির্বাহী কমিটিতে থাকলে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

নির্বাহী কমিটির কাঠামো
নির্বাহী কমিটি হবে ২৫ সদস্যের। এর মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদাধিকারপ্রাপ্ত। বাকি ২৩টি পদ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ হবে। পদগুলোর মধ্যে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, আইন ও মানবাধিকার, পরিবহন, ক্যারিয়ার ও গবেষণা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া দায়িত্বের পদ অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ছয়জন নির্বাহী সদস্য থাকবেন, যাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে।

আজীবন সদস্যপদ
গঠনতন্ত্রে সম্মানসূচক আজীবন সদস্যপদের বিধান রাখা হয়েছে। উপাচার্যের সম্মতিক্রমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা সদস্যপদ ফি প্রদানের মাধ্যমে আজীবন সদস্যপদ দেওয়া যাবে। তবে তারা কোনো নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না।

নির্বাচন কমিশন
গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তদারকিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সর্বোচ্চ পাঁচজন শিক্ষক নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের কমপক্ষে ২১ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করবেন। তফসিলে ভোটের দিন, ভোটার তালিকা প্রকাশ, মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারের তারিখ উল্লেখ থাকবে। আবাসিক হলে কোনো ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
আল ফিকহ অ্যান্ড ল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, ‘ইকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করি, দ্রুত ইকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক চর্চায় ভূমিকা রাখবেন।’

প্রশাসনের বক্তব্য
গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান বলেন, ‘আমরা খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরির পর কয়েক দফায় সাংবাদিক ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। যারা বলছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করিনি, তারা সত্য বলছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সিন্ডিকেট সর্বসম্মতভাবে গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এটি অর্ডিন্যান্স আকারে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে।’