১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ৪৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীকে শোকজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি সম্পাদিত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ৪৯ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এবং মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্ত শেষে এ নোটিশ প্রদান করে।

শোকজ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন শিক্ষক, ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গণ-আন্দোলনের পর পূর্বে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর মধ্যে একটি প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতিসংক্রান্ত, একটি একাডেমিক অনিয়ম-দুর্নীতিসংক্রান্ত এবং অপরটি ক্যাম্পাসে পূর্বে সংঘটিত ঘটনাসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত হয়।

তিনটি তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, এম. জাকির হোসেন খান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন মজুমদার।

আরও পড়ুন: অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ

তদন্তে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাঁদের শোকজ করা হয়েছে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সিন্ডিকেট গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কাজ করছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং প্রাথমিকভাবে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জবাব পাওয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ৩৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন শিক্ষক এবং ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন ফোকলোর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ। যিনি আবেদনের যোগ্যতা পূরণ না করে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক হওয়ার এবং নম্বর টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে এক ছাত্রীকে প্রথম বানিয়ে নিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও শোকজ পেয়েছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের মো. মুশফিকুর রহমান, নুসরাত শারমিন তানিয়া, ড. মো. কামাল উদ্দীন; সঙ্গীত বিভাগের ড. মো. জাহিদুল কবীর, ড. মুশাররাত শবনম; চারুকলা বিভাগের নগরবাসী বর্মণ, মাসুম হাওলাদার; দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. তারিফুল ইসলাম, মো. খাইরুল ইসলাম; বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ড. মার্জিয়া আক্তার, ড. মো. সাহাবউদ্দীন, ড. মো. মাহবুব হোসেন; হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ড. মাসুদ রানা, অন্তরা মাহবুব; হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ড. মোল্লা আমিনুল ইসলাম; কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. মো. সেলিম আল মামুন; ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ফারজানা খানম এবং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ড. মো. তুহিনুর রহমান।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হলেন সাবেক রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির; অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম; প্রকৌশল দপ্তরের উপ প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলাম; অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হালিম; পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কাজী মাহবুব ইলাহী; প্রকৌশল দপ্তরের কেয়ারটেকার মো. আসাদুজ্জামান; ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পারসোনাল অফিসার রেবেকা সুলতানা; ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পার্সোনাল অফিসার রোজিনা বেগম; হল সুপার সোহেল রানা; ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মমতাজ বেগম; উপ রেজিস্ট্রার (স্টোর) নাজমুল হুদা; সহকারী প্রকৌশলী জান্নাতুন নাঈম; শরীরচর্চা শিক্ষা দপ্তরের উপ পরিচালক মো. ওমর ফারুক সরকার; উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা; সহকারী পরিচালক (অর্থ) এস এম কাউসার আহমেদ; সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নির্মল চন্দ্র সাহা; অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রাধেশ্যাম; সঙ্গীত বিভাগের ডেমোন্সট্রেটর মো. মশিউর রহমান; সিনিয়র প্লাম্বার মোহাম্মদ আসাবুল হক এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পার্সোনাল অফিসার খালেদা জেসমিন।