০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০২

স্থানীয়দের সাথে চবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ৩ শিক্ষার্থী 

চবির আহত শিক্ষার্থী নাঈমুল, সায়েম ও মামুন   © টিডিসি

স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়া ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মামুন একই শিক্ষাবর্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। এর মধ্যে নাঈমুল ইসলামের অবস্থা বেশি গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। 

এছাড়া গতকাল রাতে পার্কভিউ হাসপাতালে মামুন ও সায়েমের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার।

মামুনের নাকে ও মুখে বেশি পরিমাণে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি কানের পর্দা ফেটে গেছে। হামলার সময় শক্ত, ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে মামুনের পিছনে ব্রেইনের অংশে আঘাত করা হয়েছে। ফলে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। এছাড়া তাঁর ব্রেইন হেম্পার হওয়ায় অপারেশন করা হয়েছে। অন্যদিকে সায়েমের মাথার মাঝ বরাবর কোপায় দুর্বৃত্তরা। এতে অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়। অপারেশনের সময় ৭ ব্যাগ রক্ত দিতে হয় তাঁকে। সায়েমের শারীরিক অবস্থার কোনোরকম উন্নতি হয়নি।

এছাড়া ঢাকায় চিকিৎসারত নাঈমুল গতকাল ১২টার দিকে ফেরসংঘর্ষ শুরু হলে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়দের ধাওয়া দিয়ে ফিরে আসার সময় তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহমেদ জুনাইদ।

মামুনের সহপাঠী শাহাব উদ্দিন বলেন, মামুনের মাথার আঘাত ডাক্তারের আশঙ্কার চেয়েও তীব্র ছিল, ব্রেনের উপরের ব্লাড-ক্লথ অপসারণ করলেই যেখানে জটিলতা কেটে যাওয়ার আশা ছিল সেখানে দেখা গেছে ব্রেনের উপর হাড়ের টুকরো অংশ ঘিরে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। এটি অপসারণে পুরো খুলি খুলে অপারেশন পরিচালনা করতে হয়েছে, ফলে পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে এটি সেরে উঠার আগ পর্যন্ত খুলি বসানো যাবে না। (এটা নিয়ে প্যানিকড হওয়ার প্রয়োজন নেই, খুলি খুলে অপারেশনের ঘটনা নতুন নয়)। তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পর্যবেক্ষণ ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই তাঁর শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। 

এবিষয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, গতকাল প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে মামুনের অপারেশন করা হয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।অপারেশনে মামুনের মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছে। তাঁর খুলি এখন ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সে যদি সুস্থ হয় তাহলে ২ মাস পর তাঁর খুলি লাগাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন। 

পার্কভিউ হাসপাতালের জি.এম জানিয়েছেন, এখানে সায়েম ও মামুনের মধ্যে শুরুতে সায়েমের অপারেশন করা হয়। তাঁর অবস্থা খুব একটা ভালো না। জ্ঞানের লেবেল উন্নতি হয়নি, এখনো ৬/৭ এ রয়েছে। নরেট সাপোর্ট চলতেছে। এরজন্য তাঁর প্রেশারটা ১২০/৭০ তে আছে। অন্যদিকে মামুনের জ্ঞানের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে, লাইফ সাপোর্টে আছে। এখন পর্যন্ত সেভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ বলেন, সায়েমের অবস্থা খুব একটা ভালো না বলে ডাক্তার জানিয়েছে। লাইফ সাপোর্টে আছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। সবার দোয়া কামনা করছি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে এক ছাত্রী একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে দারোয়ানের সঙ্গে তার তর্ক হয়। একপর্যায়ে ভবনের দারোয়ান তাকে মারধর করেন। তবে, পরবর্তীতে অভিযোগ উঠে ওই ছাত্রী দারোয়ানের সাথে তর্কের একপর্যায়ে তাকে চড় মারেন। পরে ২ নং গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া না পাওয়ায় সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক বজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমার শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অনেকের অবস্থা গুরুতর। যৌথ বাহিনী অনেক দেরিতে ঘটনাস্থলে এসেছে, ততক্ষণে অনেক রক্তক্ষয় হয়ে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।