সেই অধ্যাপকের পদায়ন বাতিল চান আশেক মাহমুদ কলেজ শিক্ষার্থীরাও
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পেলেও তাকে জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে পুনরায় পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এবার সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ওই অধ্যাপকের পদায়ন চান না বলে জানান কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা।
‘আশেকিয়ান স্বেচ্ছাসেবক’ নামে ফেসবুক গ্রুপে তার পদায়ন ঠেকাতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, কলেজে ক্যাম্পাসে ওই শিক্ষকের প্রবেশ ঠেকাতে মূল ফটকে তালা ঝুলানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এর আগে অধ্যাপক মালেকা বানুকে পদায়নের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তা-কে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নিজ বেতন ও বেতনক্রমে তার নামের পাশে বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে বদলি/পদায়ন করা হলো। বর্ণিত কর্মকর্তা আগামী ০৩ আগস্টের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন। অন্যথায় একই তারিখ অপরাহ্নে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন। বর্ণিত কর্মকর্তা আবশ্যিকভাবে তার পিডিএস এ লগইনপূর্বক অবমুক্ত ও যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলেও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার এজাহারে অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৮ জুলাই সরকারি ছুটি থাকায় ক্লাস ও ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫০০-৭০০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও তার অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতকারী আসামিরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তিতুমীর কলেজের মেইনগেট বন্ধ থাকায় আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের গেট লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
একপর্যায়ে আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের মেইনগেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে ভীতি সৃষ্টি করে কলেজের মূল ফটক ভেঙে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি, কলেজ ক্যাম্পাসের ৪০টি সিসি ক্যামেরা, অধ্যক্ষের অফিস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, জানালা, সোফাসেট, আলমারি, জানালার কাচ, সিসিটিভি মনিটর, আইপিএস, ল্যাপটপ, টেলিফোন সেট, এসি এবং সব সরকারি নথিপত্রসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র এবং উপাধ্যক্ষের অফিসের ১টি প্রিন্টার ও ১টি ডেক্সটপ ভাঙচুর ও বিনষ্ট করে।
এতে বলা হয়, কলেজের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ছাত্র সংসদের ৩টি কক্ষের দরজা, জানালা, চেয়ার, টেবিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিসিয়াল ছবি ভাঙচুর করে। ‘হৃদয়ে মুজিব’ নামক বঙ্গবন্ধু কর্নারে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু পরিবার, জাতীয় চার নেতাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আনুমানিক ১৫০টি ছবি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ প্রায় ৫০০টি ছবি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৫০০টির অধিক বইসহ, টেবিল, চেয়ার, লাইট, সিসি ক্যামেরা, আইপিএস, সরকারি তিতুমীর কলেজের সেন্ট্রাল ইন্টারনেট সার্ভার, শেখ রাসেল পুষ্প কানন, জয় বাংলা মুক্ত মঞ্চ, কলেজের ছাত্র পরিবহনের ১টি বাসের সব গ্লাস এবং পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের নিচতলার চারদিকে কাচের গ্লাস পরিবেষ্টিত সবগুলো জানালা ভাঙচুর করে।
এতে আনুমানিক এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ হতে ৩টি মনিটর, ৪টি হার্ডডিস্ক, ছাত্র সংসদের কক্ষ থেকে ১টি ডেস্কটপ, ২টি ল্যাপটপ, ১টি টেলিভিশন, ৪টি সিলিং ফ্যান, ৬টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪টি টেবিল ফ্যান, ২টি আলমারি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সরঞ্জাম, পানির ফিল্টার, তৈজসপত্রসহ অনুমান পঞ্চাশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
এতে আরও বলা হয়, পরবর্তী সময়ে একই তারিখে সময় আনুমানিক রাত ১০টা নাগাদ আসামিরা সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে তিনতলা বিল্ডিংয়ের ৪৬টি কক্ষের দরজা, জানালা, শিক্ষার্থীদের চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি, বুক সেলফ, ছাত্রাবাসের ভেতরে পার্কিংয়ে থাকা ১২টি মোটরসাইকেল, ১০টি বাইসাইকেলসহ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আনুমানিক পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। ৪০টি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৫০টি টেবিল ফ্যান, ৪৬টি সিলিং ফ্যান, ২টি টেলিভিশন, ২০টি দেওয়াল ঘড়ি, ৭ শিক্ষার্থীর তালাবদ্ধ করা টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকাসহ আনুমানিক চল্লিশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।