২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:০৬

‘জামায়াত যখন যার ঘাড়েই বসেছে তাকেই ছারখার করে দিয়েছে’ 

তাসনিম খলিল  © ফাইল ছবি

নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যখন যার ঘাড়েই বসেছে তাকেই ছারখার করে দিয়েছে। বিএনপি, ইউনূস সরকার, এনসিপি।’

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

তাসনিম খলিল এমন ফেসবুক পোস্ট কেন দিয়েছেন তা স্পষ্ট না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে হতে যাওয়া জোট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে ইঙ্গিত করেই এমন পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতায় আপত্তি জানিয়েছেন দলটির ৩০ নেতা। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন তারা।

নাহিদ ইসলামের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন মুশফিক উস সালেহীন, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, ফরিদুল হক, মোঃ ফারহাদ আলম ভূঁইয়া এবং ইমন সৈয়দ। কেন্দ্রীয় সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরমান হোসাইন। যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন অর্পিতা শ্যামা দেব, নুসরাত তাবাসসুম এবং খালেদ সাইফুল্লাহ।

সংগঠক হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বে আছেন মো. শওকত আলী, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, নফিউল ইসলাম, হামযা ইবনে মাহবুব, নয়ন আহামেদ ও আসাদ বিন রনি। উত্তরাঞ্চলের সংগঠক হিসেবে রয়েছেন দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, যিনি একই সঙ্গে জাতীয় যুবশক্তির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন নাভিদ নওরোজ শাহ্, খান মোঃ মুরসালীন, মো. সাদ্দাম হোসেন এবং আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল। যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাদিয়া ফারজানা দিনা ও ইমন সৈয়দ।

কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাওয়াদুল করিম, তারিক আদনান মুন, মো. ইমরান হোসেন, তাওহীদ তানজীম, মাহবুব এ খোদা, সৈয়দা নীলিমা দোলা, সালাউদ্দিন জামিল সৌরভ, খালিদ সাইফুল্লাহ জুয়েল এবং রফিকুল ইসলাম আইনী।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিগত এক বছর ধরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের বিভাজনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্যান্য দলের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি ও স্যাবোটাজ, এনসিপির ওপর বিভিন্ন অপকর্মের দায় চাপানোর অপচেষ্টা, ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবং পরবর্তীতে ছাত্রশক্তি বিষয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার, তাদের অনলাইন ফোর্সের মাধ্যমে এনসিপি ও আমাদের ছাত্রসংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্র হননের চেষ্টা এবং সর্বোপরি, ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠেছে।’

চিঠিতে এনসিপির ৩০ নেতা জানিয়েছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ প্রশ্নে তাদের অবস্থান-বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও আমাদের দলের মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে বলে চিঠিতে নেতারা উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা মনে করেন। নেতারা বলেন, এর আগে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এখন অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে তারা মনে করছেন।

চিঠিতে এনসিপির নেতারা আরো বলেছেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশঙ্কার সাথে লক্ষ করেছি, যখনই এই জোটের সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামনে এসেছে, এর পরপরই আমাদের সমর্থনে থাকা কর্মী-সংগঠকসহ একটা বড়সংখ্যক মানুষ আমাদের দলের প্রতি তাদের সমর্থন সরিয়ে নিতে উদ্যত হয়েছেন। যদি আমাদের সমর্থন করা মধ্যপন্থী এবং নতুন রাজনীতি প্রত্যাশা করা মানুষেরা সমর্থন সরিয়ে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে পার্টির মধ্যপন্থী সমর্থক ভিত্তি হারাব।’