২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:০৪

নীলফামারী-১ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী কে এই মাওলানা আফেন্দী?

প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী  © টিডিসি ফোটো

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বরেণ্য আলেম ও প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। তিনি বর্তমানে কওমি ধারার শীর্ষ রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার মনোনয়ন প্রাপ্তির খবরে উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তার জীবন ও কর্মের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো জানার কৌতুহল অনেকেই। চলুন একনজরে তা জেনে নেই।

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার সোনারায়ের এক সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আজহার আলী ছিলেন অত্র অঞ্চলের মানুষের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। পারিবারিক ঐতিহ্য ও আদর্শের পথ ধরেই তিনি শৈশব থেকে ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন।

তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় পর্যায়ে সম্পন্ন হলেও উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলুম দেওবন্দ-এ গমন করেন। সেখানে অত্যন্ত মেধার পরিচয় দিয়ে তিনি 'দাওরায়ে হাদিস' (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। দেওবন্দ থেকে ফেরার পর থেকেই তিনি দেশীয় শিক্ষা ও রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেন।

মাওলানা আফেন্দী তার সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ইসলামী অঙ্গনের ছোট-বড় বিভিন্ন সংকটে নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। জমিয়তের কাণ্ডারি: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবে তিনি দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করেছেন। বিশেষ করে বিরোধী জোটের রাজনীতিতে আলেমদের অবস্থান সুসংহত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

হেফাজতে ইসলাম: হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হিসেবে তিনি ইসলামের মর্যাদা রক্ষা ও নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন।

রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানুরাগী। তিনি রাজধানী ঢাকার ইসলামবাগস্থ জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পরিচালনায় এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়াও উত্তরবঙ্গে তার তত্ত্বাবধানে একাধিক মসজিদ ও এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক কারণে তাকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তিনি দীর্ঘ সময় কারান্তরীণ ছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়। তাকে একজন 'স্পষ্টভাষী ও আপসহীন' নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নীলফামারী-১ আসনের প্রেক্ষাপট

ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-১ আসনে মাওলানা আফেন্দী একজন 'হেভিওয়েট' প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি এবং জামায়াতের একটি বড় ভোট ব্যাংক তার পক্ষে কাজ করবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে আলেম-উলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তার গভীর প্রভাব থাকায় তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
মাওলানা আফেন্দী মনোনয়ন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, "আমি জনগণের অধিকার রক্ষা এবং ইনসাফ কায়েমের লক্ষ্যেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বিজয়ী হলে ডোমার-ডিমলার মানুষের সেবা ও এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেব।"

সব মিলিয়ে, নীলফামারী-১ আসনে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর প্রার্থিতা আসন্ন নির্বাচনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সমঝোতা অনুযায়ী, বিএনপি জমিয়তের জন্য ৪ টি আসন ছেড়ে দিয়েছে, যার বিনিময়ে সারাদেশে বিএনপির বিপরীতে দলটি নিজেদের আর কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। তবে জমিয়তের প্রার্থীরা নিজেদের প্রতীক খেজুর গাছ মার্কায় নির্বাচন করবে।