২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫১

ওসমান হাদির জানাজার এক ঘণ্টা আগেই মানুষের ঢল

ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে হাজারো মানুষ  © টিডিসি ফটো

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণ মানুষের প্রবেশের অনুমতি দেয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চীন থেকে আনা আটটি আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা হয়। এসব গেট দিয়ে হাজারো মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করেন।

দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ শরীফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় জনসমাগম ঘটেছে। বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্র-জনতা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জানাজাস্থলে প্রবেশ করছেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই শহীদ ওসমান হাদির জানাজাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

এদিকে জানাজাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।

জানাজায় অংশ নিতে অপেক্ষমাণ কামরুল হাসান নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘হাদি ছিলেন সাহস ও প্রতিবাদের প্রতীক। এমন একজন মানুষের জানাজায় শরিক হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাও আমাদের কাছে সম্মানের। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি ফিরে এসে রাজপথে আবার নেতৃত্ব দেবেন, কিন্তু আল্লাহ তাকে অন্যভাবে কবুল করেছেন—এই বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’

আরও পড়ুন: ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই

এদিকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নোয়াখালী থেকে আসা এক যুবক বলেন, ‘হাদির মতো মানুষ বারবার জন্ম নেয় না। তার জানাজায় শরিক হতে ভোর থেকেই রওনা দিয়েছি। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও কোনো কষ্ট নেই। আশা ছিল তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আবার মানুষের কণ্ঠ হবেন, কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না—এই বেদনা নিয়েই শেষ বিদায়ে এসেছি।’

এর আগে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা পড়াবেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

তারও আগে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শনিবার দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি শর্তও আরোপ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে দেওয়া ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহিদ হিসেবে কবুল করেছেন।’

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওসমান হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। পরে বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নেওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণকারী হাদি একজন রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা ছিলেন। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়া তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।