প্রার্থী নয়, ধানের শীষ মুখ্য
সংসদ নির্বাচনে ‘প্রার্থী নয়, ধানের শীষ মুখ্য’ বলে দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিলেন দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজকে আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়ত এমনও হতে পারে তোমার এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে…..হয়ত তুমি একজনকে পছন্দ করতে সে হয়ত পায়নি। যে পেয়েছে তার সাথে হয়ত তোমার সম্পর্ক আছে একটু কম। ভাইরে, তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছো না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছো। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি। এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ। এখানে মূখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব ইনশাল্লাহ।
মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) ৭দিন ব্যাপী ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান চলবে সপ্তাহব্যাপী।
তারেক রহমান বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো…এগুলো আমরা পরিকল্পনার মধ্যে রাখবো না। এগুলোকে আমরা যেকোনো মূল্যে ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন করব জনগণের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আমাদের আজকে প্রতিজ্ঞা, আমাদের আজকের কর্মপন্থা হলো আমাদের এই পরিকল্পনাগুলোর সাথেই আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করবো। এটাই হচ্ছে আমাদের পরবর্তি দুই মাসের কাজ। এর বাইরে আর কোন কাজ নেই।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীতের দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলোর নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করা,সমর্থন নেয়া ও সমর্থন জোগাড় করার জন্য আহ্বান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
খাল খনন, বায়ু দুষন রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারাদেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ম দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতা-কর্মীদের তা জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
‘বিশেষ একজন ছাড়া সবাই খারাপ.. এটার পরিবর্তন জরুরী’ মন্তব্য করে তারেক বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’ এরকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি। দূঃখজনক হলেও ২৪ সালের ৫ তারিখের পরে কেনো জানি মনে হচ্ছে সেটির বোধহয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়, এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
তিনি বলেন, আমরা বহু দলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাসী। বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে, মতামত দেয়ার অধিকার তার আছে, বক্তব্য দেয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু বিশেষ একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ এটি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক।
‘নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নাই’ মত প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই । কেন নেই? বিগত যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। কেন আন্দোলন করেছি? কারণ সেখানে কোন জবাবদিহিতা ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কি মরে যাচ্ছে তার কোন জবাবদিহিতা ছিল না। একমাত্র গণতান্ত্রিক সমাজ দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার।
২৪’র ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড এদেশের জনগণ উল্লেখ করে তারেক বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের মানুষ। একজন গৃহবধু পাঁচ তারিখের সেই আন্দোলন মাস্টারমাইন্ড। মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে, দেশের মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র দোকানদার, রিক্সাচালক, ভ্যান চালক, সিএনজি চালক, বাসের হেলপার, ছাত্র, জনতা, মাদ্রাসার ছাত্র, ইউনিভার্সিটি কলেজ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ স্কুল কলেজের ছাত্ররা। ওই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছোট ছোট শিশুরা…ওই আন্দোলনে ৬৩ জন শিশু মারা গিয়েছে।
তরুণ সমাজসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইমিডিয়েট ভবিষ্যৎ তোমাদের উপরে বাংলাদেশের সামনের দিনে মুভিং ফরওয়ার্ড সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও তাহলে এদেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে একটি ভয়াবহ কিছু হয়ত অপেক্ষা করছে। আমরা যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।
‘দেশ গড়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।