১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০০:১৭

নির্বাচনে তারেক রহমানসহ সব প্রার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়ার আহবান

অ্যাবিগেল বয়েড ও তারেক রহমান  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) আইনসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পার্লামেন্ট সদস্য অ্যাবিগেল বয়েড। দুদিন আগে তিনি সংসদে একটি ‘নোটিশ অব মোশন’ দাখিল করে নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার দাবি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি বিপজ্জনকভাবে অবনতি হচ্ছে।

অ্যাবিগেল বয়েড তার মোশনে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি চিঠি পাঠিয়ে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তা, চলাফেরার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে পূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন—দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। বিদেশে থাকা ভোটারদের ডাকভোট ব্যবস্থাকে নিরাপদ ও কারচুপিমুক্ত রাখতে সহায়তার কথাও মোশনে উল্লেখ করা হয়।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মো. রাশেদুল হক মোশনটি দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মোশনে অ্যাবিগেল বয়েড দাবি করেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়ে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, ভিন্নমত দমন করা হয়, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করা হয়—যা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ৪টি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং সবই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত। তার মতে, শেখ হাসিনার পতনের পর তার বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং দায়ীদের বিচারের অভাব আসন্ন নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের পথে বড় বাধা।

মোশনে সাম্প্রতিক সহিংসতার কথাও স্থান পেয়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাকে তিনি উদ্বেগজনক রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে রূপ দেওয়ার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাতে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বিরোধীদের ওপর ধরপাকড় ও দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

২০২৪ সালের ‘বর্ষা বিপ্লব’ বা ‘মনসুন রেভ্যুলুশন’-এর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের সরকারি উদ্যোগের কথাও মোশনে উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে—সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিয়েছেন, যা তদন্তে নতুন তথ্য সামনে আনছে।

অ্যাবিগেল বয়েড আরও বলেন, প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাধিকার পেলেও জটিল প্রক্রিয়া তাদের ভোট দিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নতুন অ্যাপভিত্তিক পোস্টাল ভোট ব্যবস্থায় কারচুপির সম্ভাবনা সম্পর্কেও পর্যবেক্ষকদের সতর্কতা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি মনে করেন, ২০২৫ সালের ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক জেনারেল ইলেকশন সাপোর্ট (ব্যালট) প্রকল্পে যুক্ত হওয়া—যা ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগ—বাংলাদেশ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ভূমিকা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এ কারণেই তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।