১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৩৫

জামায়াত ইসলামী থেকে এমপি মনোনয়ন পাবেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা!

জামায়াতের লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি ইতোমধ্যেই দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। একক কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতই প্রথম সকল সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছে জামায়াত। বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে। দলটি থেকে এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলটির বিবেচনায় রয়েছে।

দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ও ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষিতেই এবার ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যোগ্য, সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে সংখ্যালঘু বেশ কয়েকজন দলের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। দলটি থেকেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তাদের মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এটি দলটির ইতিহাসে একটি বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

‘এটা ভালো, নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কারণ বাংলাদেশে সব ধর্ম, বর্ণ, বিভিন্ন মতপ্রকাশের লোক আছে, জাতিগোষ্ঠী আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা যদি প্রকৃতপক্ষে অবদান রাখতে চায়, তাদের (সংখ্যালঘু) তো অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে।’-বদিউল আলম মজুমদার, সুজন

সম্প্রতি জামায়াতের আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা ব্যারিস্টার শিশির মনির একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে বলেছেন, ‌‌‘এবার চমক থাকছে, জামায়াতে ইসলামীও মাইনরিটি কমিউনিটির লোকজনকে তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে নমিনেশন দেবে। এটার জন্য অপেক্ষা করুন। আমরা খুব ক্লোজলি এটা নিয়ে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন: মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে ফিরছে হিজাব-টুপি, বাদ যাবে ‘মোনালিসা’, যুক্ত হবে ‘খাদিজা’

রাজনৈতিক অঙ্গনে এ খবরে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ একে ইতিবাচক রাজনৈতিক উদারতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে জামায়াতের কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তবে তা দেশের বহুত্ববাদী রাজনীতির জন্য একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের ওপর।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটা ভালো, নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কারণ বাংলাদেশে সব ধর্ম, বর্ণ, বিভিন্ন মতপ্রকাশের লোক আছে, জাতিগোষ্ঠী আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা যদি প্রকৃতপক্ষে অবদান রাখতে চায়, তাদের (সংখ্যালঘু) তো অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা রাজনীতি করবে এদেশে, রাজনীতিবিদরা তো আর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম নাহ, তারা তো রাজনীতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই তাদেরকে সবাইকে অন্তুর্ভুক্ত করতে হবে। আমি মনে করি, এটা ইতিবাচক। এবং সব দলের এটা করা উচিত।’ 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং দলটির কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। অনেকে নোমিনেশন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, আমরাও তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি; তারাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।’