২০ আগস্ট ২০২৫, ২১:৫০

‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে এককভাবে ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ নেই’

গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম  © টিডিসি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘সুজনের জরিপ অনুযায়ী ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চান। প্রতিটি ভোটারের সেখানে মূল্যায়ন হয়। পিআর পদ্ধতিতে এককভাবে ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সংসদে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তখন এলাকাভিত্তিক যে গুণ্ডা, দখলবাজ ও চাঁদাবাজ তৈরি হয় তা বন্ধ হবে। এ জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের পরই জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা করবেন।’

বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, সব গণহত্যার বিচার এবং সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

রেজাউল করীম বলেন, ‘এখনো সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এ অবস্থায় আপনারা যেনতেন নির্বাচন করলে, যে হাজার হাজার মায়ের কোল খালি হয়েছে, হাজারো মানুষ পঙ্গু হয়েছে, চক্ষু হারিয়েছে তাদের কী জবাব দেবেন? জবাব ঠিক করে নির্বাচনের তারিখ দেবেন।’

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেনি। তারা কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এ সরকারের ঘোষণা ছিল সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও তারপরে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন, এখন পর্যন্ত সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনো অশুভ চক্রের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হয়নি উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘বর্তমানে এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল আমাদের ব্যাপারে নানা কটূক্তিমূলক, বিরক্তিকর ও অযৌক্তিকভাবে গালাগাল ও ঘৃণা করছে। আমি সেই ভাইদের বলব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনীতি করে মানবতা, দেশ ও কল্যাণের জন্য। শুধুমাত্র কয়েকজন এমপি বা কিছু সম্পদ-সম্মানের জন্য রাজনীতি করে না। তার বাস্তবতা হল ৮৭ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বহু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একজন এমপিও সংসদে যায়নি। খুনি, চাঁদাবাজ, মিথ্যাবাদী, জুলুমবাজ ও টাকা পাচারকারী যে অশুভ চক্র রয়েছে, তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনোই ব্যবহৃত হয়নি।’

সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘যারা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ৫ আগস্টের পরে দেশ গড়ার যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এই সুযোগ গত ৫৩ বছরে আর আসেনি। এই সুযোগ যদি আমরা সদ্ব্যবহার করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন ইতিহাস পড়বে তখন আমাদের ধিক্কার জানাবে, ঘৃণা করবে। সুযোগের পরেও কাজে লাগাতে না পারলে তারা তখন আমাদের নিয়ে আপসোস করবে।’

রেজাউল করীম বলেন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যখন কোনো রাজনৈতিক দল ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি, তখনো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্যায়ের প্রতিবাদে, খুনিদের বিরুদ্ধে ও দেশ গঠনের জন্য রাস্তায় নেমেছিল। আজ সেই বাংলাদেশে কিছু ক্ষমতালোভী আমাদের গুলির ভয়, মাস্তানি ও গুণ্ডামির তাণ্ডব দেখিয়ে আওয়াজ বন্ধ করতে চান। আমরা যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশকে আর বিদেশের তাবেদার রাষ্ট্র বানাতে চাই না৷ এ পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। খুশির খবর হলো আজ দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আর এ ঐক্যবদ্ধ শক্তি ক্ষমতাপ্রেমিকদের বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।’

পরে ফেনীর তিনটি আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা গাজী এনামুল হক ভূঞার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, জান্নাতুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, হেফাজতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক প্রমুখ। 

এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।