১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৫

৩৫ বছর বয়সেই মারা গেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় লেখক, কে এই বেক সে-হি?

বেক সে-হি  © ফাইল ছবি

বিষণ্নতার সঙ্গে নিজের লড়াইকে আত্মকথায় রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক বেক সে-হি আর নেই। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কোরিয়া অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশান এজেন্সি বেক সে-হির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, তিনি নিজের হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুস, লিভার ও দুই কিডনি দান করেছেন, যা পাঁচজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ ও তারিখ প্রকাশ করা হয়নি।

সংস্থাটির পরিচালক লি সাম ইয়ল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্তেও বেক যে ভালোবাসা ও আশার বার্তা ছড়িয়ে গেছেন, তা অন্যদের জীবনে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।’

বেকের ছোট বোন বেক দা-হি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার বোন সব সময় লেখার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে চেয়েছিল। সে কাউকে ঘৃণা করতে পারত না। আশা করি এখন সে শান্তিতে থাকবে। আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।’

১৯৯০ সালে গিয়ংগি প্রদেশের গোইয়াং শহরে জন্ম নেওয়া বেক সে-হি ছিলেন তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল লেখালেখি নিয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ করেন। এ সময়েই তাঁর ডিসথাইমিয়া (দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা) ধরা পড়ে। প্রায় এক দশক ধরে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সেই অভিজ্ঞতাই পরিণত হয় তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থের মূল ভিত্তিতে।

২০১৮ সালে নিজ উদ্যোগে প্রকাশ করেন বহুল আলোচিত বই ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মুনহাকদংনে বইটি গ্রহণ করে। দ্রুতই এটি দক্ষিণ কোরিয়ায় আলোড়ন তোলে এবং ২০২২ সালে অ্যান্টন হার-এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল সাড়া ফেলে। বইটি ইতিমধ্যে ২৫টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ কপি।

‘টটবক্কি’ কোরিয়ার এক জনপ্রিয় খাবার, চালের কেক দিয়ে তৈরি ঝাল, মিষ্টি ও মশলাদার পদ। বইয়ের শিরোনামেই প্রতিফলিত হয়েছে বেকের জীবনের দ্বৈত টানাপোড়েন মৃত্যুচিন্তার গভীর অন্ধকারেও বেঁচে থাকার ক্ষুধা। ২০২৪ সালে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেক বলেন, ‘আমি নিজের মৃত্যু পরিকল্পনা করছিলাম, কিন্তু হঠাৎ ক্ষুধা পেলাম, তাই টটবক্কি খেয়ে ফেললাম।’

বেকের লেখার সরল অথচ সংবেদনশীল ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যের আলোচনাকে নতুনভাবে উন্মুক্ত করে দেয়। ২০২০ সালে কে-বুক ট্রেন্ডস-এ তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম মানুষ যেন বোঝে, আমার মতো অনুভব করা লোকেরা একা নয়।’

২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় খণ্ড ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই স্টিল ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’। বেক সে-হি আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ নারীদের এক প্রতীক—যিনি বিষণ্নতার অন্ধকারেও পাঠকদের সামনে মানবিকতার এক আলোকিত মুখ তুলে ধরেছিলেন। তাঁর লেখায় প্রতিধ্বনিত হয় এক নিঃশব্দ সান্ত্বনার বাক্য, ‘আমি বুঝি তোমার কষ্ট।’