১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৫৪

পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ৫৮ পাকিস্তানি সেনা হত্যার দাবি কাবুলের

সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সতর্ক প্রহরা  © গেটি ইমেজেস

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপক হতাহতের দাবি করেছে।

আফগানিস্তানের দাবি, তাদের প্রতিশোধমূলক অভিযানে অন্তত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা আফগান সীমান্তের ১৯টি ফাঁড়ি দখল করেছে।

আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ রবিবার (১২ অক্টোবর) দেশটির সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ–কে বলেন, ‘আমাদের প্রতিশোধমূলক অভিযানে পাকিস্তানের ৫৮ সেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এখন আফগান বাহিনীর হাতে এসেছে।’ তিনি আরও জানান, অভিযানে আফগান বাহিনীরও ২০ জনের বেশি সদস্য হতাহত হয়েছেন।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি বলেন, ‘পাকিস্তানের বারবার সীমালঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে আফগান বাহিনী সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে।’ তিনি জানান, অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়।

পাকিস্তানের সরকারি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা ১৯টি আফগান সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেছে। এসব ফাঁড়িতে থাকা আফগান সেনারা কেউ নিহত হয়েছেন, কেউ পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করা হয়।

রেডিও পাকিস্তান জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী আফগান তালেবানের মানোজবা ক্যাম্প ব্যাটালিয়ন সদর, জান্দুসার ফাঁড়ি, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার ফোর্ট ধ্বংস করেছে।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভি-তে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, আফগান সীমান্তের কুররাম অঞ্চলে কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন জ্বলছে। সেখানে বলা হয়, কয়েকজন আফগান সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের কাবুলে কয়েকজন নিহত হন। সেই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। তালেবান ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, ‘বিনা উসকানিতে আফগান বাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমাদের সাহসী সেনারা দ্রুত ও কার্যকরভাবে জবাব দিয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না।’ 

তবে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিমান হামলার দায় স্বীকার করেনি। বরং ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আফগান–পাকিস্তান সীমান্তের কুনার, হেলমান্দ ও কুররাম অঞ্চলে এখন উত্তেজনা চরমে। দুই দেশের সেনা ঘাঁটিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে বেসামরিক নাগরিকেরা পালিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি ও আল-জাজিরা