ফুলবাড়ীয়ার সেই বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন ৩ ব্যক্তি
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভালুকজান এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দিয়েছেন তিন ব্যক্তি। পেট্রোল ছিটিয়ে প্রথমে বাসের সামনে আগুন ধরানো হয়। এ ছাড়া একটি লাঠিতে আগুন ধরানো হয়। এর সাহায্যে বাসের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। পরে ওই তিনজন দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফুলবাড়ীয়া-কেশরগঞ্জ সড়কের ভালুকজান এলাকায় মেসার্স ইসলাম ফিলিং স্টেশনে সামনের সড়কে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। এ ঘটনায় বাসচালক জুলহাস মিয়া (৩৫) নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার ভালুকজান গ্রামের আবদুল বারেক ও সাজেদা আক্তার দম্পতির ছেলে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পৃথক অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ ২ বনদস্যু আটক
এ ছাড়া আগুনে দগ্ধ হয়েছেন বাসের ভেতরে থাকা দুজন। তারা হলেন- উপজেলার চক রাধাকানাই গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও তার মা শারমিন সুলতানা। তারা দুজন ঢাকা থেকে ফিরেছিলেন। গভীর রাত হওয়ায় তারা বাড়িতে না গিয়ে বাসে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আগুন দেওয়ার পর মা ও ছেলে দগ্ধ অবস্থায় বাস থেকে নামেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়।
বাসে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনা ইসলাম ফিলিং স্টেশনের বিপরীত দিকে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের শোরুমের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এতে দেখা যায়, সোমবার রাত ৩টা ১৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসের সামনে যান দুজন ব্যক্তি। একজনের মাথায় ছিল টুপি, অন্যজনের মুখ ও মাথা কাপড় দিয়ে বাধা। এর ৩১ সেকেন্ড পর পেছন দিক থেকে আসেন আরও এক ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি বোতল। ওই বোতলের তরল দাহ্য পদার্থ বাসটির সামনে ও ভেতরে চালকের আসনে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে বাসের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর একটি লাঠিতে আগুন ধরিয়ে সেটি বাসের ভেতরেও দেওয়া হয়। পরে দ্রুত ওই তিনজন চলে যান।
আগুন দেখে দ্রুত লোকজনকে খবর দেন ফিলিং স্টেশনটির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আমাদের পাম্পের সামনে প্রায়ই বাস থাকে। এখান থেকেই তেল নেয়। সোমবার রাত ৩টার ১০ মিনিট আগে বাসটি এসে দাঁড়ায়। এর কিছু সময়ের মধ্যেই বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। পাম্পের ভেতরের দিকে এ ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।’
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা শোরুমের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেন তিনি। পরে পুলিশ সুপার বলেন, ১১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠন ও এবং তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত তিনটার পর মুখোশ পরা তিনজন অজ্ঞাত লোক পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে বাসে আগুন দিয়েছেন।
কাজী আখতার উল আলম আরও বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি, কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। আমরা দ্রুত মামলা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’
ফুলবাড়ীয়া শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাবুল শিকদার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যদি হয়, তাহলে আমরা কিভাবে গাড়ি চালাব? রাস্তায় গাড়ি রেখে চালক-হেলপার একটু ঘুমালে যদি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কিভাবে চলব। এ ঘটনার পর আমাদের সব চালক আতঙ্কে আছেন। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই, আমরা নিরাপত্তা চাই।’
পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম বলেন, মালিক সমিতির লোকজনের সঙ্গে আজ সভা করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি তাঁরা নিজেরাও যেন গাড়িগুলোর নিরাপত্তা দেন। এলোমেলোভাবে গাড়ি না রেখে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা প্রয়োজন।