২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৮

ফাজিল পরীক্ষায় খাতা হারানো, নকলসহ গুরুতর অভিযোগ এক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে

চাউলাকাঠী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা  © সংগৃহীত

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ফাজিল প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় উত্তরপত্র হারানোসহ নানান অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বরিশালের চাউলাকাঠী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আদ-দিরাসাতুল হাদিস তৃতীয় পত্র (বিষয় কোড ১১১০১৩) পরীক্ষায় সময়ের।

জানা যায়, ওইদিন দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ৪টা ৩০ মিনিটে। পরীক্ষা শেষে ৩ নম্বর হলের মোট ২৭টি ওএমআর সংগ্রহের সময় দেখা যায়, ২৭টি ওএমআর থাকলেও উত্তরপত্র পাওয়া গেছে ২৬টি। একটি উত্তরপত্র অনুপস্থিত থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। ঘটনার পর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি বানারীপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে জানালেও কেন্দ্রের প্রশাসনিক প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করেননি। পরদিন ১৮ নভেম্বর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইয়াসিন মৌখিকভাবে ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি ৮১৪ নং স্মারকে বিষয়টি জেলা প্রশাসক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জানান। একইসঙ্গে কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এ কেন্দ্রটিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থের বিনিময়ে নকলের সুযোগ দেওয়া হয়। কেন্দ্রটি উপজেলা সদরে স্থানান্তরের জন্য গত ১৯ অক্টোবর ৭৫৮ নং স্মারকে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন কি এখানেই শেষ?

অভিযোগ উঠেছে, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে উত্তরপত্র হারানোর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থাও বিরাজ করছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য, প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের অভিযোগে কমিটি গঠন স্থগিত এবং ছাত্রসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত আলিম পরীক্ষায় ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৩ জন।

চাউলাকাঠী ইসলামিয়া মাদ্রাসার অতীতে অনিয়মের নজিরও রয়েছে। ২০২৩ সালের ফাজিল পরীক্ষায় নকলের দায়ে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত যেসব শিক্ষক রয়েছেন তাদের মধ্যে মাওলানা ইয়াসিন, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা ইমরান ও বাবুল আকতার—এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়ভাবে প্রচলিত।

ঘটনার পর থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওএমআর ছেঁড়া অবস্থায় থাকায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে কক্ষ পর্যবেক্ষকরা ২৭টি ওএমআর পেলেও উত্তরপত্র ২৬টি পান। খোঁজাখুঁজির পরও অনুপস্থিত উত্তরপত্র পাওয়া না যাওয়ায় বিষয়টি সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়।

উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কক্ষ পর্যবেক্ষক সৈয়দ শফিকুল হক (দোসতিনা আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা) ও মো. ওয়ালিদ (কচুয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা)-এর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইয়াসিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।