১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫৫

৩২ নম্বরে ফুল দিতে যাওয়া সেই রিকশাচালকের জামিন

মো. আজিজুর রহমান  © সংগৃহীত

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ফুল দিতে গিয়ে গণপিটুনির পর হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে যাওয়া রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান জামিন পেয়েছেন। রবিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

আসামিপক্ষে আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। 

এর আগে শনিবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২-এ ফুল দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হন আজিজুর। তিনি নিজেকে রিকশাচালক বলে পরিচয় দেন। সেদিন তাকে দেখেই ‘আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ’ বলে চিৎকার করতে থাকে লোকজন। তাদের মধ্যে উপস্থিত এক ব্যক্তি ওই রিকশা চালকের হাত থেকে ফুলের তোড়া টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। ফুলের তোড়ায় লেখা ছিল ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।’

কাঁদতে কাঁদতে রিকশাচালক বলছিলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি ভাই। আমি একটা ফুলের তোড়া কিনছিলাম শাহবাগ থেকে ৪শ টাকা দিয়ে ভাই, আমার বহুত কষ্টের টাকা। আমি সারাদিনে এই টাকাটা ইনকাম করছি। আমি শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমি কোনো রাজনীতি বা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না ভাই।’ 

পরে উপস্থিত লোকজন তার রিকশাটিও ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় ওই রিকশাচালককে কয়েকজন মারধর করলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ নিয়ে যায়। 

পরদিন ১৬ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার ধানমণ্ডি থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ধানমণ্ডি থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান। পরে শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের নেতৃত্বে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর উপর্যুপরি এলোপাতাড়ি গুলি, পেট্রলবোমা ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে।

ঘটনার দিন বিকেলে আসামিদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ হুকুমে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্বিচারে গুলি করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী মো. আরিফুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে যান। নিকটস্থ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হন। পরে গত ২ এপ্রিল আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।