১২ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৩

১২ জুলাই : কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে ছুটির দিনেও বিক্ষোভ-মিছিল করছে শিক্ষার্থীরা

শুক্রবার (১২ জুলাই) ছুটির দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ১২ জুলাই (শুক্রবার) ছুটির দিনেও থামেনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন সারাদেশে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী।

এর আগে ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদেই শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরিতে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারসংলগ্ন চত্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৫টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা সোয়া এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

আরও পড়ুন: শনিবার অবরোধ থাকছে না কোটা আন্দোলনকারীদের

শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগ ছাড়ার আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানান, পরদিন শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের ৬৪ জেলায় অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেব। আমাদের এক দফা দাবি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।’

দিনটি ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১২তম দিন। সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক কোটার সংস্কার ও বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

এদিন রাতে শাহবাগ থানায় মামলা হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, সদস্যদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

আরও পড়ুন: শনিবার অবরোধ থাকছে না কোটা আন্দোলনকারীদের

রাজধানীর বাইরেও এদিন আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে অন্তত ১৫টি স্থানে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় কলাভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক পেরিয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক, কবি নজরুল কলেজের সামনে দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

রাজশাহীতে বিকেল পাঁচটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন। এই বিক্ষোভে অংশ নেয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে বিকেল ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরাও অংশ নেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরে আলমাস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়। ব্যানার ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। একই সময় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও মশাল মিছিল করেন।

আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সমাবেশ শেষে বাইরে সড়কে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক থেকে মিছিলটি শুরু হয়।

ময়মনসিংহেও আন্দোলনের জোয়ার ছিল স্পষ্ট। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা অংশ নেন এই কর্মসূচিতে। আনন্দ মোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, মুমিনুন্নেছা কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একযোগে বিক্ষোভ করেন।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। নীলফামারীর সৈয়দপুরে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। বগুড়ায় সাতমাথা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনে যোগ দেন অনেকে। নোয়াখালীর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

তবে মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ, ছাত্রলীগ সেখানে মানববন্ধনে বাধা দেয়।

আরও পড়ুন: সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ মোড় অবরোধ

শুক্রবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও ছিল তৎপরতা। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মন্তব্য করেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল— সেই প্রেতাত্মারাই এখন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার দেশের জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। কেউ সেটি ব্যাহত করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেন, ‘এই আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে। বাংলা ব্লকেডের নামে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে ১১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের দমনপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি তাদের দক্ষিণ এশিয়ার ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানায়, পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।