বাড়বে বুদ্ধি, পড়ায় হবে মনোযোগী, খেলার ছলেই কীভাবে শিশুকে কৌশলগুলো রপ্ত করাবেন?
চার বছরের রোহন সারাদিন দৌড়ে বেড়ায়। বই পেলেই আঁকিবুকি কাটে, ছিঁড়ে ফেলে। মায়ের চিন্তা—কীভাবে তাকে শান্ত করে পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায়? আসলে রোহনের মতো ২ থেকে ১২ বছরের শিশুরা চঞ্চল হবেই। এই বয়সে তাদের মনোজগতে থাকে অদম্য কৌতূহল, যা অনেক সময় দস্যিপনা হিসেবে চোখে পড়ে। তবে খেলার ছলেই শিশুদের বৌদ্ধিক বিকাশ ও মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব।
ইউনিভার্সিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেড়ে ওঠার বয়সে শরীরচর্চা, খেলাধুলো তাদের লক্ষ্য স্থির করতে বা একাগ্রতায় সাহায্য করে। সমীক্ষাটি হয়েছিল ৭-১৩ বছরের শিশুদের নিয়ে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সংক্রান্ত পরীক্ষায় বসানোর আগে তাদের ৯ মিনিট শরীরচর্চা করানো হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত শিশুরা শরীরচর্চার ধাপগুলো সম্পূর্ণ করেছে, তাদের পরীক্ষার ফল ভাল হয়েছে, কাজে মন দিতে সুবিধা হয়েছে।
২০২৩ সালে ‘স্প্রিঙ্গার নেচার’ নামক একটি প্রকাশনা সংস্থার তরফে স্কুলে যাওয়ার আগের পর্যায়ের শিশুদের সংবেদ, বুদ্ধিমত্তা, পড়াশোনার উপরে ‘মাইন্ডফুলনেস-বেস্ড কাইন্ডনেস কারিকুলাম’র প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাতেই দেখা গিয়েছিল, শিশুদের মনো-সমাজিক জগতে এবং আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। অভিভাবকেরাও খুশি হয়েছিলেন শিশুদের বৌদ্ধিক বিকাশ দেখে।
ভারতের একটি নামী ‘প্রি-স্কুল’-চেনের পাঠ্যক্রম দেখেন অনীতা মদন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি, আড়াই তিন থেকে ৫ বছর বয়সিদের বৌদ্ধিক বিকাশ এবং মনঃসংযোগ বৃদ্ধির উপায় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
গল্প শোনানো
শিশুকে জোরে জোরে গল্প পড়ে শোনাতে হবে। তবে তা রিডিং পড়া নয়। বরং গল্প বলার কায়দাটি হবে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যম। শরীর এবং মুখের ভঙ্গিমা, অভিব্যক্তি দেখে শিশু সেটি বুঝবে এবং তাদের কল্পনা পাখনা মেলবে। পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে বোঝা যাবে, কতটা মনোযোগী ছিল সে। প্রশ্নের মাধ্যমে নতুন উত্তরও পাবে সে। তৈরি হবে শোনার জন্য কান। সহজ অভ্যাসই তাদের মনোনিবেশে সাহায্য করবে।
পাজল সমাধান
বিভিন্ন রকম আকার ম্যাচ করতে দেওয়া পাজল শিশুদের ধীরে চলার শিক্ষা দেয়। ম্যাচ করতে গেলে ভাবতে হয়, মন দিতে হয়। আর এতেই তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। একই সঙ্গে পাজল সমাধান করার আনন্দ, তাদের আবার এই ধরনের খেলায় উৎসাহ জোগায়।
শোনা ও খেলা
শুনে শুনে খেলতে হয় যে ধরনের খেলা বা নির্দেশিকা শুনে কাজ করতে হয় এমন খেলা শিশুকে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং মনঃসংযোগের শিক্ষা দেয়। শিশুরা মন দিয়ে কোনও কথা শুনতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে শেখে।
সৃজনশীলতা
আঁকা, হাতের কাজ করা যেমন খুদের জন্য উৎসাহের, তেমনই এতে তাদের বৌদ্ধিক বিকাশ হয়। আঁকার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে শেখে সে। ধীরে ধীরে মনের ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে পারে।
প্রকৃতির সঙ্গ
পার্কে যাওয়ার সময় বা কাছেপিঠে হাঁটতে গেলেও শিশুকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন। কতগুলো পাখি দেখেছে সে, কোন রঙের ফুল ছিল, কী ফুল— এগুলো তার জানার পরিধি বিস্তার করে। প্রকৃতি সম্পর্কে আগ্রহও বাড়িয়ে তোলে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, প্রতিটি শিশুর শেখার ধরন আলাদা। তাই শিক্ষক ও অভিভাবকদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—শেখাকে শিশুদের কাছে আনন্দময় করে তোলা। যখন শিশু কোনো বিষয়ে নিজে আগ্রহী হবে, তখনই তার মনোযোগ স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। [সূত্র: আনন্দবাজার]