‘ধমক দিয়ে কর আদায় নয়’— সতর্ক করলেন অর্থ উপদেষ্টা
করদাতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ বা ‘ধমক দিয়ে’ কর আদায় করার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যদি লাভবান হন এবং মানসম্মত সেবা পান, তাহলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর পরিশোধ করবেন। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) প্রকল্পের মাইলফলক উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, ‘কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। জোর করে কর আদায় করা যায় না— করদাতারা আয় করলে তারাই কর দেবেন।’ কর সংগ্রহে উন্নত সেবার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ তখনই কর দিতে আগ্রহী হবে, যখন তারা এনবিআরের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাবে। সেবা না পেলে করদাতারা সহযোগিতা করতে আগ্রহী হবে না।’
ব্রাজিলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত ২৬ শতাংশের মতো, কারণ জনগণ সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত সুবিধা পায়। ড. সালেহউদ্দিন ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না। বিএসডব্লিউ প্রকল্প ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ ও গতিশীল সেবার পথ তৈরি করছে।’
উল্লেখ্য, বিএসডব্লিউ প্রকল্পের আওতায় আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট (সিএলপি) অনলাইনে ইস্যু করা হচ্ছে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি সিএলপি অনলাইনে ইস্যু করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৪ শতাংশ আবেদন ১ ঘণ্টার মধ্যেই এবং ৯৫ শতাংশ ১ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে করদাতাদের মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ‘ই-রিটার্ন চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ব্র্যাক, বুরো বাংলাদেশ এবং রেনেটা পিএলসি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা স্বনামধন্য হলেও, আমাদের আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের স্বীকৃতির আওতায় আনতে হবে। শুধু পরিচিত প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।’
গত করবর্ষে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সরকারি কর্মচারী, তফশিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং সব মোবাইল অপারেটরের কর্মীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে রিটার্ন দাখিলে বড় অগ্রগতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।