সময় ১০ ঘণ্টা, ইশরাক হোসেন কি মেয়র হচ্ছেন?
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন তার সমর্থকরা। টানা কয়েকদিন ধরেই চলছে এই আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা আগামীকাল বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশ হবে আগামীকাল বুধবার। এ অবস্থায় ইশরাক হোসেনের মেয়র হওয়া না হওয়ার সিদ্ধান্ত কালই জানা যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। শপথ নিয়ে দায়িত্বপালন করে আসছিলেন তাপস। ওই নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
আরও পড়ুন: তবুও গেজেট–বঞ্চিত ৪৩তম বিসিএসের ৬৫ প্রার্থী
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একই বছরের ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ (মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপস) সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে ইশরাকের করা নির্বাচনী মামলায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ে শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করা হয়। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আন্দোলনকারীদের আল্টিমেটাম
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন তার সমর্থকেরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনের ফলে বন্ধ রয়েছে ডিএসসিসির সব নাগরিক সেবা। সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেক মানুষ।
আন্দোলনকারীরা আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম দেন। আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। ইউনিয়নগুলো আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এর পর থেকে পরিচ্ছন্নতাসেবা, ময়লা পরিবহনসেবা, বিদ্যুৎ–সেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। সংগঠনগুলো হলো স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহণ চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি, ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি।
এ ছাড়াও, ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি মানা না হলে বৃহত্তরের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা ন্যায্য আন্দোলনের পক্ষে আছি। প্রয়োজনে দলগতভাবে এই আন্দোলনে আমরা সমর্থন দেবো।’
রিটের ওপর আদেশ কাল
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আদেশের এ দিন ধার্য করেন।
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও ইসির গেজেট প্রকাশ নিয়ে মো. মামুনুর রশিদ নামের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ১৩ মে রিটটি করেন। রিটটি আজ মঙ্গলবার শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। বেলা একটা থেকে বেলা প্রায় দুইটা পর্যন্ত শুনানি নিয়ে আদালত বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে পরবর্তী শুনানির জন্য রাখেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শুনানি চলে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনজীবী কায়সার কামাল এবং এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান ও মো. মাহফুজুর রহমান শুনানিতে ছিলেন।
পরে ইশরাকের অন্যতম আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আগামীকাল (বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন।