বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উমেদারের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক উমেদার (এমএলএসএস) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২৪৫ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগ এনেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিট বাদী হয়ে বুধবার (৫ নভেম্বর) বাগেরহাট সদর থানায় মামলাটি দায়ের করে।
মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন- উমেদার মান্নানের স্ত্রী জেসমিন নাহার, মো. আনিসুর রহমান (৬২) ও সালেহা বেগম। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে তারা ১৯ হাজার ৯৬৭ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানটি ৫০০০ টাকা থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগে ৪-৫ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় না লাগিয়ে আব্দুল মান্নান তার নিজের মালিকানাধীন ‘সাবিল গ্রুপ’-এর ছয়টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাক্তন উমেদার (Member of Lower Subordinate staff –এমএলএসএস- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) আব্দুল মান্নান তালুকদার ১৯৮৪ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত এমএলএসএস পদে চাকরি করেন। ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। চাকরিরত অবস্থাতেই জমি কেনাবেচার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ডিসি অফিসে চাকরির সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।
জানা গেছে, জায়গা জমির বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। অবসর গ্রহণের পর তিনি ‘মানুষ মানুষের জন্য’ স্লোগানে ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মসের ঢাকা কার্যালয় হতে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরণ ছিল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং এর মালিকানা স্বত্ব ছিল মাত্র কয়েকজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তবে প্রতিষ্ঠানটির ৯৫% শেয়ারের মালিক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার পরিবার এবং মাত্র ৫% শেয়ারের মালিক মামলায় ২ নম্বর অভিযুক্ত মো. আনিসুর রহমান।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থের নিশ্চয়তাসহ সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়। এ প্রচারণার আলোকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লি. বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের ৫০০০ টাকা হতে সর্বোচ্চ যেকোন পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ৪/৫ বছরে বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুণ করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী এর শর্তানুযায়ী শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজার হতে মূলধন সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড পুঁজিবাজার হতে মূলধন সংগ্রহ না করে উচ্চ মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে সূচনা লগ্ন হতে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৯৬৭ জন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান তালুকদার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থের মধ্য থেকে মোট ৬৬ কোটি ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা তারই মালিকানাধীন সাবিল গ্রুপের ৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্তে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হল- এ্যাজাক্স জুট মিলস লিমিটেড, ২. সাবিল ড্রেজিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, সাবিল জেনারেল হাসপাতাল, সাবিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, সাবিল ল প্লাজা ও সাবিল মৎস্য প্রকল্। বাকি অর্থ নামে-বেনামে অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহে স্থানান্তর করেন।
সিআইডি জানিয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে ২৪৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা নিজ মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানে লিজের নামে স্থানান্তর করেছে। প্রতারনার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে আব্দুল মান্নানসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা রুজু করেছেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালনা করছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।