যশোরে তিন মাসে ১৮ খুন, উদ্বেগজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
যশোরে গত তিন মাসে ১৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা জেলার সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে রয়েছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও পারিবারিক-পরকীয়া সম্পর্ক। হত্যার ধরণও রীতিমতো ভয়াবহ কুপিয়ে, গুলি করে, ধর্ষণের পর পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়া, এমনকি লেপ-তোষকের বাক্সে লাশ লুকিয়ে রাখার মতো হৃদয়বিদারক কায়দায় মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২২ মে অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম। এ হত্যার পর ওই এলাকায় মাতুয়া সম্প্রদায়ের প্রায় ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ঘটনাটির মূল কারণ মাছের ঘের নিয়ে বিরোধ হলেও তদন্তে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে।
এরপর ৯ জুন যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মইন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই রাতে চৌগাছার পুড়াহুদা গ্রামে ছোট ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে বড় ভাই রবিউল ইসলাম নিহত হন।
১৪ জুন, অভয়নগরের নাউলি গ্রামে কুয়েত প্রবাসী হাসান শেখকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতের ভাই মুন্না জানান, পূর্বশত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড। আর একই রাতে শার্শার দুর্গাপুর বাজারে রাজনৈতিক বিরোধে নিহত হন বিএনপি কর্মী লিটন হোসেন। ঘটনার চারদিন আগেই ঈদের দিন শার্শার ডুবপাড়া গ্রামে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন বিএনপি নেতা আব্দুল হাই।
ঈদের দিনই ঝিকরগাছার হাড়িয়া গ্রামে ভয়াবহ আরেকটি ঘটনা ঘটে। বেড়াতে এসে নিখোঁজ হয় ১০ বছরের শিশু সোহানা। পরে তার ধর্ষিত মরদেহ পুকুরে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ নয়ন ওরফে নাজমুস সাকিব নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে চলতি মাসের ৯ জুলাই বাঘারপাড়ার ঘোষনগর গ্রামে সুচিত্রা সেন দেবনাথ নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার হয় লেপ-তোষকের স্টিলের বাক্স থেকে। হত্যায় তার স্বামী তপন দেবনাথকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে, পরকীয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ ১২ জুলাই রাতে যশোর শহরের ষষ্ঠিতলা এলাকায় আশরাফুল ইসলাম বিপ্লব নামের এক যুবক কুপিয়ে খুন করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, বন্ধুর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করায় তার ওপর হামলা চালানো হয়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বহু সন্ত্রাসী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় তারা আবার ফিরেছে। এখন তারা একের পর এক খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’ তিনি দ্রুত এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবুল বাশার বলেন, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন। অধিকাংশ ঘটনার মোটিভ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং জড়িতদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।