০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫২

পুশইনের শিকার সেই অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর

অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি  © সংগৃহীত

বিএসএফের অমানবিক পুশইনের শিকার বহুল আলোচিত অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তার পরিবারকে মানবিক দিক বিবেচনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সারে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তার ৮ বছরের সন্তান মো. সাব্বির শেখকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন। 

গত ২৫ জুন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৬ জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে। পুশইনের পর ওই ভারতীয় নাগরিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করে এবং গত ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে প্রেরণ করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তার ২ নাবালক শিশু ছিলেন। মানবিক বিবেচনায় আদালত ০২ ডিসেম্বর তাদেরকে স্থানীয় জিম্মায় প্রদান করেন এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারী ও দুই শিশুকে পুশইন করায় সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর কূটনৈতিক পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে। উভয় দেশের সম্মতিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলো।

হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিএসএফের অমানবিক পুশইন আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর প্রতি সুরক্ষা এবং চিকিৎসাগত ঝুঁকি বিবেচনা করে বিজিবির এই কার্যক্রম ন্যায়, মানবতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজিবি আশা করে, পুশইনসহ এ ধরনের অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী কার্যক্রম বিএসএফ বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে সীমান্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ, মানবিক ও আইনসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখবে।