০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:০৫

ছাত্রাবাসে মাদক সেবন-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৩, আইসিইউতে একজন

ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ  © সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে মাদক সেবন ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে সংঘর্ষের পর আহতদের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে সাকিবুল হাসান রানা নামে উচ্চমাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শামিমা ইয়াসমিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজের মাত্র একটি ছাত্রাবাস রয়েছে, সেটি শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য। বিগত সরকারের আমলে সেটি দখলে ছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটল। এতে আহত এক শিক্ষার্থী আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি করছেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে। এছাড়া ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

প্রফেসর শামিমা ইয়াসমিন আরও বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। এরমধ্যে ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেওয়া হলে তারা যাবে কোথায়? ছাত্রাবাস বন্ধ না করতে অনেক শিক্ষার্থী যোগাযোগও করেছেন বলে তিনি জানান। তাই ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি পুনরায় চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোরশেদ আলম তরুণ–সদস্য সচিব মো. সেলিম হোসেন গ্রুপ আর সুইডেন আসলাম গ্রুপ ছাত্রাবাসেমাদক সেবন, বহিরাগত রাখা ও চাঁদাবাজি নিয়ে বিরোধে জড়িত রয়েছে। শনিবার রাতে মাদক সেবন নিয়ে কথা কাটাকাটির পর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।

এতে গুরুতর আহত তিনজন হলেন সাকিবুল হাসান রানা (বিজ্ঞান বিভাগ, সেশন ২০২৪–২৫), হৃদয় আহমেদ (মানবিক বিভাগ, সেশন ২০২৪–২৫) এবং আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত (মানবিক বিভাগ, সেশন ২০২৫–২৬)। অভিযোগ রয়েছে, জান্নাত ছাত্রদলের প্রভাবশালী একটি গ্রুপের সহায়তায় তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করতেন।

হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তরুণ–সেলিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য মোমেন পালোয়ান আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি তরুণ গ্রুপের প্রভাব ব্যবহার করে ক্যাম্পাস ও হলে আধিপত্য বিস্তার করছেন এবং তাকে মাদক সেবন ও বহিরাগতদের নিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

তারা আরও অভিযোগ করে আরও বলেন, আমরা কেউ এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে করা হয় টর্চার। এতে ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেউই ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কথা বলে না। ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে ফর্ম পূরণের বাণিজ্যেও ছাত্রদল এগিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা।

এদিকে, শনিবার রাতে সংঘর্ষের পর পুলিশ রাতেই ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভোর পর্যন্ত অবস্থান করে। বর্তমানে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে বলে জানা গেছে।