২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:৩৭

প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে ‘আপত্তিকর অবস্থা’য় আইনজীবী আটক

অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান, একটি ছবিতে তাকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে (বামে)  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী ও নোটারি পাবলিক হামিদুর রহমানকে এক গৃহবধূর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে স্থানীয়রা। মারধরের পর ওই গৃহবধূর সঙ্গে বিয়ে পড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পারকালিনগর হুড়কাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

হামিদুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ও জেলা শহরের পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা। পারকালিনগর হুড়কাপাড়া এলাকার এক গৃহবধূর (৩৮) বাড়িতে তাকে আটক করে স্থানীয়রা। শনিবার সন্ধ্যায় আটক করে মারধর ও আটকে রাখার পর স্থানীয়রা কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই আইনজবীকে উদ্বার করে সেনাবাহিনী। ঘটনার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের সঙ্গে হামিদুর রহমানের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও আটককৃত গৃহবধূর স্বজন সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী বিদেশে থাকেন, আর তিনি বাড়িতে একা বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে যাতায়াত ছিল আইনজীবী হামিদুর রহমানের। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বাড়িটিতে প্রবেশ করলেও সন্ধ্যার পরেও বের না হওয়ায় স্থানীয়রা বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখেন। পরে কয়েকজন যুবক তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় লোকজন ডেকে বাড়িতে গেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আইনজীবী হামিদুর রহমান। পরে তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আইনজীবী হামিদুর রহমানকে আটকের পর তাকেসহ ওই নারীকে বেধড়ক মারধর করে ও ঘরে আটকে রেখে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কাজী ডাকা হলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পালিয়ে যান স্থানীয়রা। পরে ওই আইনজীবীকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী সদস্যদের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করেন আইনজীবী হামিদুর রহমান। এমনকি দুজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেও সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দেন ওই গৃহবধূ।

স্থানীয় যুবক বাবু, আব্দুল আলিম, তরিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই লোকের যাতায়াত ছিল এই বাসায়। আমরা সন্ধ্যার দিকে জানালার পাশে একটি ছিদ্র দিয়ে তাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় বিছানায় দেখতে পাই। আরও লোকজন নিয়ে বাড়িতে গেলে ওই গৃহবধূ আইনজীবীকে তার ভাই পরিচয় দেয়। তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। এর অন্য কোন সুরাহা না পেয়ে স্থানীয় মুরুব্বিরা কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্বার করে নিয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর বড় বোন বলেন, উকিল হামিদুর রহমান মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করত বোনের বাসায়। সন্ধ্যার দিকে আটক করে স্থানীয়রা মারধর করে বিয়ের আয়োজন করে। তবে হামিদুর রহমান সাবিরন বেগমের কেমন ভাই বা আত্বীয় তা বলতে পারেননি তিনি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজী ইসারুল ইসলাম জানান, বিয়ে দিতে হবে এমন খবর পেয়ে সেখানে যাই। কিন্তু যাওয়ার পর জানতে পারি, ওই নারীর স্বামী আছে। বিষয়টি জানার পর বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাই। কারন এটি সম্পূর্ণভাবে আইন পরিপন্থী কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর মধ্যেই সেনাবাহিনী আসলে আটককারীরা পালিয়ে যায় এবং ওই ব্যক্তি ও নারী ছাড়া পায়।

অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসাহাক আলী জানান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছেন। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না তা আমার জানা নেই। অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেও জানান তিনি।

এ নিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি আইনজীবী হামিদুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম জানান, এ বিষয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।