০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৬

মৌসুমের প্রথম যাত্রায় সেন্ট মার্টিনের পথে ১২শ পর্যটক

সেন্ট মার্টিন  © সংগৃহীত

বহুল প্রতীক্ষার পর অবশেষে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছে জাহাজগুলো। মৌসুমের প্রথম যাত্রায় তিন জাহাজে করে প্রায় ১ হাজার ২০০ যাত্রী কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। গত মাসের ১ তারিখে সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দিলেও রাত্রি যাপনের সুযোগ না থাকায় এতদিন জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজগুলো রওনা করে। প্রথম এই যাত্রায় অংশ নিতে ভোর থেকেই ঘাটে আসা শুরু করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের জাহাজগুলোর যাত্রীরা। ক্রয় করা টিকিট প্রর্দশন করে জাহাজের আসন গ্রহণ করার আগে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়  'পরিবেশবান্ধব' পানির বোতল।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক অরুপ হোসেন বলেন, প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিন যাচ্ছি, সত্যিই খুব রোমাঞ্চকর লাগছে এই ভ্রমণ। প্রশাসনের তৎপরতাও প্রশংসনীয়, আশা করছি সময়গুলো ভালো কাটবে।'

সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজগুলোতে, পরবর্তী দুই মাস (৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত) থাকছে দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ।

জাহাজ মালিকদের ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ৬টি জাহাজকে প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে, যাত্রীর আনুপাতিক হার বিবেচনায় আজ ৩টি জাহাজ যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটা ও নদীর নাব্যতা বিবেচনায় প্রতিদিনের যাত্রার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো বিকেলে আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে ফিরবে।

গতবছর থেকে টেকনাফ থেকে বন্ধ রয়েছে জাহাজ চলাচল, ফলে কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ সমুদপথ অতিক্রমে ভ্রমণ কিছুটা ক্লান্তিদায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রোকসানা আলী। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন আমার পছন্দের জায়গা অনেকবার গিয়েছি। আগে টেকনাফ থেকে দ্রুত যাওয়া যেত, কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এতো দূরত্বের জার্নি একটু কষ্টের। তবুও তৃপ্তি মিলবে দ্বীপে পৌঁছে, কারণ সেখানে প্রাকৃতিক প্রশান্তি আছে।

ঘাটে প্রবেশের সময় তল্লাশির পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা নিয়োজিত আছেন।

পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে সেন্টমার্টিন যাত্রা উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে আমাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। সমুদ্রপথে জাহাজে এবং সেন্টমার্টিনে আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তা দেবে, যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।

সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার গত অক্টোবরে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। এর মধ্যে রয়েছে—রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষেধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ-বিক্রয়, প্রবাল-পাখি-কাছিমসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া মোটরযান চলাচল বন্ধ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রথম দিনের যাত্রা পরিদর্শনে উপস্থিত জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, 'দ্বীপ রক্ষায় ঘোষিত নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।'