২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৪

বাউফলে ভূমিহীনদের জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিক্ষোভ সমাবেশ  © টিডিসি

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের চর ঈশানের ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্তো দেওয়া প্রায় পাঁচশ একর জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। 

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের তালতলি বাজার এলাকায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, গত সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে একটি দল মাটি খনন যন্ত্র দিয়ে তাদের জমির মাটি কাটতে শুরু করে। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন সেখানে ছুটে যান। সেখানে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা হাতে পাহারায় থেকে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। 

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, পাশের ইউনিয়ন নাজিরপুরের ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির নামে তাদের জমি দখলের চেষ্টা চলছিলো। দখলকারীরা পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ পলাশের লোক দাবি করে ভুক্তভোগীদের ভয়-ভীতি দেখান। তখন ভয়ে তারা বাধা দিতে পারেনি বরং বাধ্য হয়ে ঘরে ফিরে আসেন। পরের দিন মঙ্গলবার ভুক্তভোগীরা গিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করেন। কিন্তু দখলকারীরা তা শোনেনি। এরপরে বুধবার সকালে ভূমিহীন কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে ওই চরে গিয়ে ১৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

জমি বন্দোবস্তো পাওয়া ভূমিহীন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর ঈশানের প্রায় পাঁচশ একর জমি ১৪১ জন ভূমিহীনদের বন্দোবস্তো দেওয়া হয়েছে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা চাষাবাদ করে আসছিলেন। তিন-চার মাস ধরে ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির নামে কিছু ভূমিদস্যু ওই জমি দখলের চেষ্টা করছে। তাদের সমর্থন দেন বিএনপির একজন নেতা। অভিযুক্তরা দখলকারীরা কেউ ভূমিহীন না।

১৯৫৪ সালে বন্দোবস্তো পাওয়া কৃষক মো. মোসারেফ হোসেন বলেন, চর ঈশানের জেএল নম্বর ৬৬ এবং ৪৮ নম্বর খতিয়ানের ৩৫ ও ৩৬ দাগের ৫ একর জমি তিনি বন্দোবস্তো পেয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। সম্প্রতি সেই জমি ভূমিদস্যুদের নজরে পড়েছে। ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক সেই দখল করার পায়তারা করছে।

মোসা. কহিনুর বেগম (৬০) নামে এক নারী বলেন, তাদের থাকার ভিটি পর্যন্ত নাই। এ কারণে তার ও তার স্বামী সুলতান হাওলাদারের নামে সরকার ২০০১ সালে চর ইশানের একর জমি বন্দোবস্তো দেয়। সরকারিভাবে সেই জমি বুজিয়ে দেওয়ার পর থেকে তারা চাষাবাদ করে আসছেন। সেই জমি একটি ভূমিদস্যু মহল দখল করার চেষ্টা করছে।

তার স্বামী সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘সরকার আমার নামে কাগজ দিছে,জমি আমার। জীবন দেব, তবু জমি ছাড়বো না।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা হাজী মোহাম্মদ পলাশ বলেন, ‘আমি কিংবা আমার কোনো লোক চর ঈশানের জমি দখল করতে যাননি। যতটুকু জেনেছেন, নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির লোকজন আদালতের ডিগ্রী বলে ওই জমি দখলে নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন।’ 

এ বিষয়ে বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ  (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার বলেন, সেদিন (২২ অক্টোবর) দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এক পক্ষের হাতে আটকৃতদের নিয়ে আসে। লিখিত কোনো অভিযোগ না পাওয়ায়, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

বাউফলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন,‘যেসব ভূমিহীনদের নামে জমি বন্দোবস্তো দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের জমি ভোগ দখল করবেন। তবে যেহেতেু ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে, তাই কাগজপত্রের সঠিকতা নিরুপন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে বলে জানান তিনি।’